একইভাবে কুতুব আলী ও জমিরসহ আরও অনেকে চামড়া ব্যবসা গুটিয়ে নেমেছেন অন্য পেশায়। ২০১৪ সালের পর থেকে এভাবে অন্তত চার শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ী জীবন জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
ঢাকায় আড়তে চামড়া সরবরাহ করে বছরের পর বছর টাকা আটকে থাকার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন তারা। আর টিকে থাকাদের মধ্যে অনেকের ব্যবসার বাতি নিভু নিভু অবস্থায়।
চামড়া ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে জানান, ‘ব্যবসায় ভর্তুকি দিতে শেষ পর্যন্ত জায়গা বিক্রি করে টিকে আছেন। আগে ব্যবসা বড় ছিল। পুঁজির অভাবে সীমিত আকারে কোনো মতে টিকে আছেন তারা। ’
বর্তমানে তাদের মতো আরও অন্তত অর্ধশত ব্যবসায়ী পুঁজি স্বল্পতায় বাড়ির জায়গা বিক্রি করে পুঁজির যোগান দিয়েছেন এ ঈদে মৌসুমে। ব্যবসার শেষ দেখতে গিয়ে তারা এখন নিঃস্ব প্রায়। এবার লোকসান হলে অন্যদের মতো তারাও অল্প পুঁজির ব্যবসায় পা বাড়াতে হবে। নতুবা অন্য কাজে নামা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সিলেট শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের আগে সমিতিতে অন্তত ৬শ’ ব্যবসায়ী ছিলেন। সদস্য সংখ্যা কমে বর্তমানে ১৫০ জনে। বাকি সাড়ে ৪শ ব্যবসায়ী পূঁজি খুইয়ে কেউ কৃষিকাজে, কেউ মাংস বিক্রি, কেউ গরু ব্যবসায় আবার কেউ পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি ঈদুল আজাহায় চামড়া কিনে সিলেটের ব্যবসায়ীরা ঢাকায় আড়তে দেন। আড়তদাররা সেই চামড়া সরবরাহ করেন ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনে। কিন্তু ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন থেকে টাকা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। বছরের পর বছর মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখেন আড়তদাররা। ফেরত চাইলে ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন থেকে টাকা না পাওয়ার দোহাই দেওয়া হয়। এ যাবত সিলেট শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের চামড়া সরবরাহের প্রায় ৩০ কোটি টাকা আটকে আছে ঢাকায়।
অথচ চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার নামমাত্র ৩/৪ শতাংশ লাভে ঋণ দেয়। কিন্তু এতে ওপর তলার ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও নিচু তলার ব্যবসায়ীদের পুঁজি ফিরে পাওয়ার দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম।
ব্যবসায়ীরা জানান, লোকসানের মুখে টিকে থাকার একটাই কারণ পুঁজি ফিরে পাওয়া। ব্যবসা থেকে সরে গেলে টাকা ফিরে পাওয়া যাবেন না। তাছাড়া বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগে ঈদে যারা ২০ হাজার পিস চামড়া কিনতেন, তারা এখন ১০ হাজার পিস কেনার ক্ষমতা রাখেন না।
সিলেট শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যবসায় মাইর খাইতে খাইতে (লোকসান দিয়ে) চামড়া ব্যবসায়ীরা পথের ভিখারি। আগে সমিতিতে ৬শ’ চামড়া ব্যবসায়ী ছিল। এখনে আছে ১৫০। সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রায় ৩০ কোটি টাকা এখনো ঢাকায় আটকে আছে। ঈদ কাঁচা চামড়া কিনতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়। বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে। ’
এভাবে চলতে থাকলে এ ব্যবসা গুটিয়ে নেবে সবাই। তাই মাঠ পর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন ও সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
শাহজালাল বহুমুখী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ শামীম আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চামড়া ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা যাই হোক, নির্ভর করবে টাকা প্রাপ্তির ওপর। ঢাকা থেকে যে টাকা পাওয়া যাবে, তার ওপর ভিত্তি করেই সিলেটে চামড়া ক্রয় করা হবে। ’
সিলেট থেকে সোয়া লাখ পিস পশুর চামড়া লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকছে ৮০ হাজার পিস গরুর চামড়া এবং ২২ থেকে ২৫ হাজার খাসি ও ১৭ হাজার ছাগল-ভেড়ার চামড়া। এর বিপরীতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সিলেট থেকে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা লক্ষাধিক পিস হলেও এবার প্রতি ফুটে ১০ টাকা কমিয়ে দিয়েছেন ট্যানারি মালিক অ্যাসোসিয়েশন। গত বছর ৪০ টাকা ফুটে চামড়া কিনেন ট্যানারি মালিকরা। এবার প্রক্রিয়াজাত চামড়া কিনবেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা করে। আর মাঠ পর্যায়ে কাঁচা চামড়ার মধ্যে গরু কিনবেন ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং খাসি-বকরি ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। আর লবণজাত করা চামড়ার ফুট প্রতি ৩২ টাকায় ক্রয় করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৮
এনইউ/জিপি