কিন্তু এবার আড়তে একই চামড়ার গড় দাম হচ্ছে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি চামড়ায় তাকে ‘ধরা’ খেতে হচ্ছে একশ’ থেকে দেড়শ টাকা।
কেন পানির দরে চামড়া বিক্রি, এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছেন। অথচ ক’দিন পর এরাই চামড়ার দাম বাড়িয়ে দিবেন। নানা অজুহাতে আড়তদাররা আমাদের ‘ফতুর’ করে ছাড়ছেন।
সিরাজুলের মতোই একই রকম অভিযোগ স্থানীয় খাগডহর জামিয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম তাজুল ইসলাম কাশেমী’র। গড়ে সাড়ে ৫’শ টাকা করে তিনি প্রায় দুই শতাধিক গরুর চামড়া কিনেছেন।
গত বছর ভালো লাভ পেলেও এইবার কেনা দামই দিচ্ছেন না আড়তের ব্যবসায়ীরা। ফলে মুখ ভার করে বসে আছেন আড়তে।
খণ্ড খণ্ড এসব চিত্র ময়মনসিংহ শহরের পাকা চামড়ার বাজার চামড়া গুদামের। বুধবার রাতে এ গুদাম ঘুরে দেখা গেল, সরকারের বেধে দেওয়া দামে কোরবানির চামড়া এখানে কেনাবেচা হচ্ছে না। ফলে মাথায় হাত পড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের।
ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকভর্তি চামড়া আসতে থাকে শহরের চামড়া গুদামে। ফলে এ চামড়া গুদামের প্রতিটি চামড়া ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনেই শ্রমিকদের ব্যস্ততা।
ট্রাক থেকে কাঁচা চামড়া নামিয়ে আনছেন কেউ। আবার কেউ কেউ চর্বি ছড়াচ্ছেন চামড়া থেকে। চামড়ায় লবণ মাখাতেও দেখা গেলো অনেক শ্রমিককে।
চামড়া গুদামে একটি আড়তের সামনে নির্ধারিত দাম না পেয়ে হা-হুতাশ করছেন স্থানীয় বোরোচর এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক বিল্লাল হোসেন।
ক্ষোভের সঙ্গে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে সরকার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। কিন্তু কোন ব্যবসায়ীই নির্ধারিত দাম পাচ্ছেন না।
আড়তদাররা চামড়া কিনতেই অনীহা প্রকাশ করছেন। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে তারা একেবারে কম দামে চামড়া কিনে নিজেরা মজুত করছেন। সুযোগ বুঝে ট্যানারি মালিকদের কাছে ঠিকই তারা দ্বিগুণ লাভে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিবেন। ’
জানা যায়, এ চামড়া গুদামে কমপক্ষে ২০জন বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই কোটি টাকার চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ট্যানারি মালিকগুলোর কাছে বিক্রি করেন।
তারা নিজেরাই সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত প্রতি বর্গফুট দামকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গড়পড়তা দামে চামড়া কিনেছেন।
অবশ্য মৌসুমি ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আড়তের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বর্গফুটের হিসাবই বুঝেন না ওইসব ব্যবসায়ীরা।
‘হঠাৎ কসাই’ দিয়ে তারা চামড়া তুলেছেন। অনেক চামড়াই নষ্ট হয়ে গেছে। এমন চামড়ায় এর চেয়ে বেশি দাম সম্ভব নয়।
এ গুদামের আড়তের আরেক বড় ব্যবসায়ী বদর উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি খাসির চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং বকরির চামড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায় কিনছেন তারা।
গত বছর তারা এ চামড়া কিনেছিলেন কমপক্ষে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশিতে।
আড়তদারদের সিন্ডিকেটের বিষয়ে স্থানীয় চামড়া গুদামের চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, একটি গরুর চামড়ার জন্য ১শ টাকার লবণ লাগে। এর সঙ্গে শ্রমিক খরচ তো আছেই। চামড়া সংরক্ষণেও ব্যয় আছে।
তিনি বলেন, এবার চামড়ার কোনো অভাব নেই। ফলে ট্যানারি মালিকরা শেষ পর্যন্ত সব চামড়া কিনবেন কি না এ নিয়ে আমাদের আতঙ্ক কাটছে না। ফলে কোন সিন্ডিকেট নয়। মান ও আকার বুঝেই চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এমএএএম/এসএইচ