যেমন চুয়াডাঙার শাহিন ব্যাপারী হাটে ৪০টি গরু তুলেছিলেন এবার। এরমধ্যে ২০টি গরু বিক্রি করেছেন চার লাখ টাকা লোকসানে।
শাহিন ব্যাপারী বলেন, ১৫ বছর ধরে গরুর ব্যাবসা করি। গত ১২ বছরে ব্যাপারীরা এতো ধরা খায়নি। মানুষ এবার গরু কম কোরবানি দিয়েছে। আমার মনে হয় মানুষের হাতে টাকা নেই। থাকলে আমার এমন অবস্থা হতো না।
বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ট্রাকে অবিক্রিত গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ব্যাপারীরা। মূলত অতি লোভ বা লাভ করতে গিয়েই ব্যাপারীরা ধরা খেয়েছেন বলে জানায় গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট কর্তৃপক্ষ।
ঈদের আগে রোববার (১৯ আগস্ট) গাবতলী পশুর হাটে প্রচুর ক্রেতা ছিল। কিন্তু ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর দাম ১ লাখ টাকার উপরে চেয়ে বসেন ব্যাপারী। ফলে ক্রেতারা অনেকে গরু কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। আকাশচুম্বী দাম চেয়ে বেশি লাভের আশায় গরু ছাড়েননি ব্যাপারীরা।
কোরবানির ঈদের দু’দিন আগে চড়া দামে গরু বিক্রি হয়েছে। ব্যাপারীরা মনে করেছিলেন শেষ দিন গরুর দাম আরও চড়া হবে। কারণ গত কোরবানির ঈদে এমনটি হয়েছিল। অনেক ক্রেতা গরুই পাননি। কিন্তু এবার হয়েছে উল্টো। যারা কেনার তারা আগেভাগে কিনে ফেলায় শেষ দিনে গরু ছিল চাহিদার চেয়ে বেশি। ফলে ব্যাপারীদের আশায় ‘গুড়ে বালি’ হয়েছে।
গাবতলী হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি ৩০ বছর গাবতলী পশুর হাটে কমিটিতে আছি। বিগত ১২ বছর এমন কম গরু বেচাকেনা আমি দেখিনি। কথায় আছে অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। ব্যাপারীরা বেশি খাইতে গিয়েই ধরা খাইছে। ৫০ হাজার টাকার গরুর দাম চেয়েছে এক লাখ টাকা। ফলে ক্রেতাদের মনের মধ্যে বড় ধাক্কা লাগছে। ১৯ আগস্ট প্রচুর ক্রেতা নামছে। কিন্তু ওইদিন গরুর দাম শুনে ক্রেতারা হাট থেকে চলে গেছেন, আর ফেরেননি।
ব্যাপারীদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এখনও টুকটাক গরু বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপারীরা এখন ঠিকই ১ লাখের গরু ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। তাহলে এখন কীভাবে কম দামে গরু বিক্রি করছেন তারা। আসলে লাভ করারও একটা সীমা আছে। অতি লোভেই ডুবেছেন গরুর ব্যাপারীরা।
প্রাণিসম্পদ অধিফতর সূত্র জানায়, ঢাকায় গরু, ছাগল ও মহিষ মিলে মোট ২০ লাখ পশুর চাহিদা থাকে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত পশু সরবরাহ করা হয়েছে। গতবছর শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর দাম চড়া হয়। এ জন্যই এবার সরবরাহ বেড়েছে। কোরবানির ঈদে লম্বা ছুটি। ফলে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এই দু’টি কারণেই ঘটনা এমন হয়েছে।
ঢাকা থেকে গরু ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, এবার ঢাকায় বেশি পশু সরবরাহ হয়েছে। এছাড়াও লম্বা ছুটি থাকায় মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন বেশি। যে কারণে কোরবানির পশু ঢাকা থেকে ফিরে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এবার আমরা প্রমাণ করলাম কোরবানির ঈদে ভারতের গরুর প্রয়োজন নাই। ভারত ছাড়াই দেশীয় গরুতে কোরবানি সম্ভব। ভারত গরু না দেওয়ায় বাংলাদেশ লাভবান হবে। ভারতীয় গরু না আসলে দেশে গরু উৎপাদনও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
এমআইএস/এএ