বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিন দিন বাড়লেও কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমছে। গত বছর যে দামে ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে এবার সেই দামেই গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে।
বুধবার (২২ আগস্ট) ও বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) খুলনার শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে ছোট-বড় আকারভেদে প্রতিটি চামড়া মাত্র ১শ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন মাদ্রাসায় দান করা চামড়া বিক্রি করতে হতাশায় পড়েছেন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, ‘কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকরা কোরবানির ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এবছর চামড়ার দাম যে হারে পাওয়া যাচ্ছে, তাতে চামড়া সংগ্রহের যাতায়াত ব্যয় উঠানো কঠিন হচ্ছে। ’
চামড়া পট্টিতে চামড়া বিক্রি করতে আসা আড়ুয়াবর্ণী দারুল কুরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক আসাদুল্লাহ ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রির টাকা গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। দেশের অসংখ্য মক্তব, মাদ্রাসা, এতিমখানার আয়ের অন্যতম উৎস কোরবানির চামড়ার বিক্রি থেকে আয়। এবার চামড়ার মূল্য সর্বনিম্ন। বলতে গেলে সংগ্রহ করতে যা ব্যয় হচ্ছে, চামড়া বিক্রি করে তা উঠছে না। চামড়া ব্যবসায়ীরা নামমাত্র মূল্য দিয়ে গরিবের হক নিয়ে যাচ্ছে। ’
মাদানিনগর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘চামড়ার দাম এবার অনেক কম। মাঝারি গরুর প্রতিটি চামড়া ২শ টাকা, বড় চামড়া ৫শ টাকা এবং ছোট চামড়া ১শ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ দামে চামড়া বিক্রি করলে সংগ্রহ ব্যয়ও উঠে আসবে না। চামড়া বেশি পেলেও দাম না পাওয়ায় মাদ্রাসা চালাতে হিমশিম খেতে হবে। ’
দৌলতপুর থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, ‘তিনি যে বাড়িতে কাজ করেন, সে বাড়িতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকায় কেনা গরুর কোরবানি দেওয়া হয়েছে। সেই গরুর চামড়া মাত্র ৬শ’ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। ’
নাট্যকর্মী কামরুল কাজল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “চামড়ার টাকাটা এতিমে পায়, তাই চামড়ার কোনো দাম নাই। ওদিকে চামড়ার জুতো কিনতে গেলে পায়ের ঘাম মাথায় ওঠে। ”
কোরবানি দিয়েছেন এমন অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ী নামধারী সিন্ডিকেটের ইচ্ছা অনুযায়ী তাদের নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। গত বছরও গরুর চামড়া দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু সে একই মাপের চামড়া এবার ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকার বেশি পাওয়া যায়নি।
তবে খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার কম দামে চামড়া কিনতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শেখপাড়া চামড়া পট্টির মামুন লেদার কমপ্লেক্সের মালিক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দাম কম হওয়ায় এবার বেশি চামড়া পাওয়া গেছে। ’
কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, ‘তারা এবার ধরা খেয়ে গেছেন। চামড়ার দাম যে এতো কমে যাবে তা কেউই ধারণা করতে পারিনি। ’
চামড়ার দাম কম হওয়ায় ৫০ শতাংশ চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছেন খুলনা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ডালী।
এদিকে কোরবানির চামড়া পাচার রোধ এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে খুলনা র্যাব-৬ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট ও ব্যাপক তল্লাশি কর্মকাণ্ড চলছে।
খুলনা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া ভারতে পাচাররোধে কড়া নজরদারি বসিয়েছেন পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পশুর চামড়া পাচার যাতে না হয় সেজন্য জেলা পুলিশ ১২টি চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
জিপি