ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লাউয়ের পিস ৩ টাকা, চাল কুমড়া ২ টাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
লাউয়ের পিস ৩ টাকা, চাল কুমড়া ২ টাকা খুলনার সবজি বাজার-ছবি-বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়ার হাসেম আলী পাইকারি কাঁচাবাজারে সবজির দামে ধস নেমেছে। ১৫ দিন আগে যে লাউয়ের পিস ১৫ টাকা দরে বিক্রি করত কৃষকরা তা এখন ৩ টাকাতে নেমে এসেছে। অনুরূপভাবে যে চাল কুমড়ার প্রতি পিস ২০ টাকা দরে বিক্রি হতো তা ২ টাকাতে নেমে এসেছে। হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে সবজির দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন মহাসংকটে। তারা বাজারে দাম না পাওয়ায় ক্ষেতে পঁচছে তাদের স্বপ্নের ফসল।

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ডুমুরিয়ার হাসেম আলী পাইকারি কাঁচাবাজারের বাণিজ্য ভাণ্ডারের আড়ৎদার প্রতাপ বালা বাংলানিউজকে বলেন, সবজির পাইকারি বাজার এবার সর্বনিম্নে এসেছে। বাজার পর্যন্ত কৃষকরা সবজি এনে যে দামে বিক্রি করেন তাতে পরিবহন খরচ ওঠে না।

যে কারণে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল তুলছেন না। তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

প্রতাপ বালা জানান, এক সপ্তাহ আগে যে লাউয়ের পিস ১৫ টাকা দরে বিক্রি করত কৃষকরা, তা এখন ৩ টাকাতে নেমে এসেছে। মিষ্টি কুমড়ার কেজি আগে বিক্রি হতো ৩০ টাকা তা এখন ১৫ টাকা, করল্লা ২০ টাকার টা ৯ টাকা, উস্তে ৩০ টাকার টা ১২ টাকা, শশা ২০ টাকার টা ১১ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকার টা ৮ টাকা, লাল শাক ২০ টাকার টা ১৫ টাকা, ঢ়েঁড়স ২০ টাকার টা ১০ টাকা, ঝিঙ্গা ১৫ টাকার টা ৭ টাকা, দেশি ওল ৪৫ টাকার টা ৪০ টাকা, হাইব্রিড ওল ৩৫ টাকার টা ৩০ টাকা ও ডাটা শাক ১০ টাকার টা ৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উলা ডুমুরিয়া বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক আব্দুর রহিম সরদার বলেন, কোরবানির ঈদের পর পাইকারি বাজারে সবজির দাম খুবই কমে গেছে। কোরবানির ঈদের পর মাংসের জন্য সবজির চাহিদা থাকে না। সবজির উৎপাদন অনেক হলেও চাহিদা না থাকায় এখন দাম নেই। তবে দুই-এক দিন পর দাম বাড়তে পারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শশ্য ভাণ্ডারখ্যাত খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনা, ঘোনাবান্দা, তেলিখালী, পেড়িখালী, কাঠামারী, উড়াবুনিয়া, হাজীবুনিয়া, তালতলা, বকুলতলা, কুশাউলা, ভান্ডারপাড়া, রংপুর, সাড়াদিচিয়া, খর্ণিয়া এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা হাসেম আলী পাইকারি কাঁচা বাজারে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করেন। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর এমনি কি ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ীরা এ হাট থেকে পাইকারি দরে সবজি কেনেন। ট্রাক ও পিকআপ ভরে তারা সবজি নিয়ে যান।
বর্তমানে এসব এলাকায় ব্যাপক সবজির ফসল হলেও দাম নিম্নপর্যায়ে নেমে আসায় কৃষকদের মাথা আকাশ ভেঙে পড়েছে।

ঘোনাবান্দা গ্রামের কৃষক হরিচাঁদ মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাগে এবার মরা ছাড়া উপায় নেই। বাজারে তরকারির দাম নেই। কষ্ট কইরে (করে) ফসল উৎপাদন করলিও (করলেও) তা আর বাজারে আনতি (আনতে) পারছি না, ওহনিই পঁচতিছে। আইনে (এনে) কি লাভ, পানির দামের চেয়েও দাম কম অইলে (হলে) কি কইরে আনবো। সব তরি-তরকারি এখন বর্ষার পানিতে পঁচতিছে (পঁচছে)। ’

তালতলা গ্রামের উত্তম মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষেতে অনেক ফসল হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সবজির দাম অত্যন্ত নিম্ন হওয়ায় সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। লাভ তো দূরের কথা বাজারে নিয়ে বিক্রি করে যে দাম পাই তাতে ভ্যান ও পিকআপ ভাড়া হয় না।

কৃষক প্রতাপ জানান, সাত বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়িতে করলা, বরবটি, শশাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেছিলাম। সবজি বাজারে আনার উপযোগী হওয়ার সময় দাম পড়ে গেছে। তাই আড়তে ফসল নিতে পারছি না। ঘেরের ভেড়িতে সব পচছে। আমাদের উপজেলার কোথাও সবজি সংরক্ষণের হিমাগার নেই। থাকলে হয়তো এই চরম বিপদে পড়তে হতো না।

খুলনার সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী ঘোনাবান্দা গ্রামের মিলন বৈরাগী বলেন, পচনশীল ফসল সংরক্ষণের জন্য বিশেষায়িত কোল্ডস্টোরের অভাবে ডুমুরিয়ার কৃষকের সাফল্য অনেক সময় দুঃখে পরিণত হয়। যেমনটি হচ্ছে এখন। সবজির বাজারে ধস হওয়ায় কৃষক ফসল তুলছেন না। জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও উপজেলায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের মুখ মলিন। সম্প্রতি কোরবানির পশুর মাংস খাওয়া বেড়ে যাওয়ায় সবজির উপর চাপ কিছুটা কমেছে। যে কারণে সবজির চাহিদা কমে গেছে। ডুমুরিয়ায় সবজি সংরক্ষণ করার কোনো হিমাগার নেই। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার করতে পারলে ভবিষ্যতে কৃষকদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হতো না। তবে হিমাগারের জন্য নিরবিছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে।

এদিকে হাসেম আলী পাইকারি কাঁচাবাজারে সবজির মূল্য সর্বনিম্ন হলেও খুলনা মহানগরীর বাজারগুলোতে সবজির দাম খুব একটা কমেনি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামে বড় ফারাক রয়েছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা, চাল কুমড়ার প্রতি পিস ১৫-২০ টাকা, কেজি দরেও ২০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ২৫ টাকা, করল্লা ২৫-৩০ টাকা, শশা ২০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, লাল শাক ২০ টাকা , ঢ়েঁড়স ২৫ টাকা, কুশি ২০-২৫ টাকা, ঝিঙা ২০ টাকা, দেশি ওল ৪৫ টাকা ও ডাটা শাক ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।