শনিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বার্ষিক লেকচারে কথাগুলো বলেন মালয়েশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব অধ্যাপক জোমো কেওমি সুনদারাম।
অনুষ্ঠানে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক জোমো বলেন, এসডিজিতে সবচয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পুষ্টিহীনতা। এমডিজি কিংবা এসডিজিতে দারিদ্র্য হ্রাসের কথা বলা হলেও পুষ্টিহীনতা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। তিনভাবে পুষ্টিহীনতার প্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি, খাবারের অভাব, গুণগত খাবারের অভাব এবং অসচেতন খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতা। খাবারের অভাব অনেকটা কমে এসেছে। তবে গুণগত খাবারের অভাবে ওজনহীনতা রয়েই যাচ্ছে। আবার অসচেতন খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতা বাড়ছে ব্যাপক আকারে। এর ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে।
জোমো সুনদারাম বলেন, বিশ্বে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ খাবারের অভাবে থাকলেও দুই বিলিয়নের বেশি মানুষ অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশেও দারিদ্র্য হ্রাস হলেও পুষ্টিহীনতা কমেনি সেই হারে।
বিশ্বে পুষ্টিহীনতার কারণে খরচ হচ্ছে প্রতিবছর একেকজন মানুষের জন্য গড়ে ৫০০ ডলার। যা মোট অংকে বিশ্বের জিডিপির ৫ শতাংশ। ২০১৪ সালের ম্যাকিনজি রিপোর্ট অনুযায়ী এর মধ্যে স্থূলতার কারণে খরচ হচ্ছে ১.৯ থেকে ২.১ বিলিয়ন ডলার।
অধ্যাপক জোমো বলেন, এসডিজির জন্য আরেক বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। প্যারিস ইউএনএফসিসিসি কপ-এ বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস না বাড়ানোর জন্য একমত হয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। যদিও বিজ্ঞানিরা তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্বে কার্বন ডাই-অক্সাইড ঘনীভূত হয়েছে ৩৯০ পিপিএম। এটি ৪৫০ হলেই তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এক্ষেত্রে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যদিও সোলার প্যানেলের দাম অনেক বেশি, তবে প্রযুক্তির উন্নতির ধারাবাহিকতায় এটির দাম কমে আসছে। উন্নয়নশীল কিংবা স্বল্পোন্নত দেশ বলে কয়লাভিত্তিক কিংবা অন্যকোনো জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা ঠিক হবে না। মধ্যবর্তী কোনো জায়গা নেই। সরাসরি নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে জাম্প দিতে হবে আমাদের।
তিনি বলেন, জীবনমানের উন্নয়ন হবে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ কমাতেই হবে। এজন্য আরও বেশি হারে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। উন্নয়নের নতুন মেকানিজম খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এসডিজির জন্য তৃতীয় বড় সমস্যা আয় বৈষম্য- এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক জোমো বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে যতো উন্নত হচ্ছে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ততো বাড়ছে। ধনী দেশগুলেতে এ বৈষম্য প্রকট।
তিনি জানান, ১৯৬০-৬২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র ২০টি দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ২১২ ডলার, ২০০০-০২ সালে তা বেড়ে হয় ২৬৭ ডলার। অন্যদিকে ১৯৬০-৬২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০টি দেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১১ হাজার ৪১৭ ডলার। ২০০০-০২ সালে তা প্রায় তিনগুন বেড়ে হয় ৩২ হাজার ৩৩৯ ডলার।
অধ্যাপক জোমো বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো যেসব পণ্য উৎপাদন করছে তার মূল্য হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে ধনী দেশগুলো যেসব পণ্য তৈরি করছে তার মূল্য সেই অনুপাতে কমছে না। এটা আয় বৈষম্য বাড়াতে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮
এজেড/এসএইচ