সম্প্রতি যেসব বন্দরগুলো চালু হয়েছে সেসব বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া মিলছে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে অহেতুক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে।
শনিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ফেনীর বিলোনিয়া স্থল বন্দরের করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ্য করে মতিয়ার রহমান বলেন, গত নয় বছরে সেখানে এখনো পর্যন্ত আমদানি বাণিজ্য শুরু হয়নি। রফতানি হয়েছে কিছু ইট। আবার এরই মধ্যে কিছু মানুষ জীবন
নগরে এলসি স্টেশন খোলার চেষ্টা করছে। ভারত সরকারও চাইনা যেখানে সেখানে যত্রতত্র এলসি স্টেশন খোলা হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনও এমপোর্ট ডিউটির উপর নির্ভরশীল। ভারত যেমন তাদের গ্রাম পর্যায়ে ভ্যাট ও ইনক্যাম ট্রাক্সের পরিধি বাড়িয়েছে। তাদের ইমপোর্ট ডিউটিও আমাদের চেয়ে অনেক কম। সুতরাং আমাদের যদি যত্রতত্র এলসি স্টেশন খোলা হয় তাহলে ইমপোর্টের নামে চোরাচালান বাড়বে। যার পরিণতি ভয়াবহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যেসব পণ্য আমদানি হয়ে থাকে তার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান অফিস এখনও কলকাতায়। এ কারণে ব্যবসায়ী কাছাকাছি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে স্বাচ্ছন্দ্য প্রকাশ করে থাকে। তারা চাই কলকাতা থেকে সকালে এসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শেষ করে আবার সন্ধ্যায় ফিরে যেতে। এক্ষেত্রে বেনাপোল বন্দর উল্লেখ্যযোগ্য। পরের অবস্থান ভোমরা, বুড়িমারী, হিলি, সোনামসজিদ ও দর্শনা। এসব বন্দরে অবকাঠামোগত সমস্যায় ব্যবসায়ীরা চাহিদা মতো পণ্য আমদানি/রপ্তানি করতে পারছেন না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সোনামসজিদ বন্দর আমদানি-রপ্তানির যথেষ্ট সম্ভবনাময়ী বন্দর। কিন্তু অবকাঠামো সমস্যায় সেখানে মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে বাণিজ্য। পানামা করপোরেশন নামে একটি অপদার্থ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এ পর্যন্ত একটি ভালো পণ্যগার, পণ্য পরিমাপের স্কেল বা রাস্তাঘাট করতে পারেনি। কর্তৃপক্ষের উচিত পানামার সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করে অন্য কোনো প্রাইভেট সেক্টরে কাজ দেওয়া। এক্ষত্রে অবশ্যই দেখতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় সামর্থ্য আছে কি না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতের পেট্রাপোল এলসি স্টেশন ২০০৮ সালে স্থলবন্দর ঘোষণা হয়। বন্দরটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। আগামী ২০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে তাদের বন্দরে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের বন্দর রয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
প্রয়োজনে সরকার আমাদের বন্দরগুলোকে হোম অথবা ফাইন্যান্স (অর্থমন্ত্রণালয়ের) অধীনে দিতে পারে। এতে বাণিজ্যে গতিশীলতা ফিরে আসবে। পানি যেমন বাধা পেলে রুট পরিবর্তন করে তেমনি ব্যবসায়ীরাও বৈধ সুযোগ সুবিধা না পেলে তারা ওই রুটে আমদানি-রপ্তানি করতে চাইবে না।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায়, দেশে সর্বমোট অনুমোদিত ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বেনাপোল স্থলবন্দর, বাংলাবান্দা স্থলবন্দর, সোনামসজিদ স্থলবন্দর, হিলি স্থলবন্দর, বিরল স্থলবন্দর, টেকনাফ স্থলবন্দর, বুড়িমারি স্থলবন্দর, আখাউড়া স্থলবন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, দর্শনা স্থলবন্দর, তামাবিল স্থলবন্দর, বিবিরবাজার স্থলবন্দর, কোবরাকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দর, নাকুগাঁও স্থলবন্দর, রামগড় স্থলবন্দর, সোনাহাট স্থলবন্দর, তেগামুখ স্থলবন্দর, চিলাহাটি স্থলবন্দর, দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর, ধানুয়া স্থলবন্দর, শেওলা স্থলবন্দর ও বাল্লা স্থলবন্দর।
এই ২৩টি বন্দরের মধ্যে সচল রয়েছে ১০টি বন্দর। সর্বশেষ সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর চালু হয়ে চলমান বন্দরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১টি। এর ছয়টি সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে অন্য পাঁচটি চলছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। অন্যান্য ১২টি স্থলবন্দর দিয়ে এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, মিয়ানমার, বার্মা ও নেপালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সচল রয়েছে।
বাইরের দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ। রফতানি পণ্যের মধ্যে কাঁচা পাট ও পাটের তৈরি পণ্য উল্লেখ্যযোগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮
এজেডএইচ/এনটি