গত মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর), বুধবার (৩১ নভেম্বর) এবং বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) তিনদিনে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকার চেক নিয়েছেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী ও রকিবুর রহমান, সাবেক পরিচালক খাজা গোলাম রসুল, বর্তমান পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান, মিনহাজ মান্নান ইমনসহ ১৪০ জন শেয়ারহোল্ডার। এদের বেশিরভাগই টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগও শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে ডিএসই’র পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দর সময়ে চীনের কাছ থেকে শেয়ার বিক্রির টাকা পেয়েছি। এখন শেয়ারের দামও কম, ফলে বিনিয়োগও শুরু করেছি।
প্রায় একই কথা বলেছেন ডিএসই’র আরেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে এখন তারল্য সংকট চলছে। ফলে এই টাকা পুঁজিবাজারের জন্য বড় ধরনের সার্পোট দেবে।
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এএম মাজেদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ে অফিসিয়ালি কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছে ডিএসই’র ২৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু শেয়ারহোল্ডার শেয়ার কিনছেন, এ কারণে পুঁজিবাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
উল্লেখ্য, কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পাওনা অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছয়টি শর্তে ১০ শতাংশ কর ছাড়ের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
শর্তগুলো হচ্ছে-শেয়ারহোল্ডারকে শেয়ার বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ বাংলাদেশের বাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে, প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারকে একটি ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে, শেয়ার বিক্রির করে পাওয়া সম্পূর্ণ অর্থ সরাসরি ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে, ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা অর্থ জমা হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে, সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগের তারিখ থেকে তিন বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকবে ও নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্টে লেনদেনের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ তিন বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকতে হবে।
তবে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া লভ্যাংশ আয় ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানান্তর করা যাবে।
এছাড়াও বিনিয়োগ থাকা তিন বছরে প্রতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীকে তার নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্টের সংশ্লিষ্ট বছরের ক্লাইন্ট লেজার ডিটেলস এবং ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিবরণী সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে দাখিল করতে হবে। এই শর্তগুলো মেনে নিয়ে এরই মধ্যে ১৪০ জন সদস্য টাকার চেক নিয়েছে।
তার আগে চলতি বছরের ৩ মে চীনা জোটটিকে ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বিএসইসি’র অনুমোদনের পর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে গত ১৪ মে চীনা জোটের সঙ্গে চুক্তি সই করে।
এরপর গত ৩ সেপ্টেম্বর ডিএসই চীনা কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে এবং ৪ সেপ্টেম্বর চীনের কনসোর্টিয়াম ডিএসই’র শেয়ার গ্রহণ করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়াম ৯৪৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৬ হাজার ৬২৫ টাকার বিনিময়ে ডিএসই’র ২৫ শতাংশ বা ৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ১২৫টি শেয়ার কিনে নিয়েছে।
শর্ত অনুযায়ী, চীন থেকে প্রাপ্ত ৯৪৭ কোটি টাকার উপর ৫ শতাংশ হারে ৪৭ কোটি টাকার কেপিটাল গেইন টেক্স দিতে হবে। আর বাকি ৯০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
এমএফআই/আরআর