রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব আয়কর মেলায় কর দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার সময় করদাতারা এ কথাগুলো বলছেন। এদের মধ্যে অনেকে আগামীবার অনলাইনে কর দেওয়ার পরিকল্পনাও করছেন।
রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবরক্ষক আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় আয়কর দিতে কোনো ঝামেলা পোহতে হয় না। বরং সবাই সহযোগিতা করেন। তাই যানজট পেরিয়ে হলেও মেলায় রিটার্ন দাখিল করতে এসেছি।
কর অঞ্চল-১ এর করদাতা উল্লেখ্য তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের পর কর দিতে গিয়েছিলাম কর অফিসে। ওখানে প্রায় একঘণ্টা অপেক্ষা করে এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আপনি যে তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়, আরো কাগজপত্র লাগবে। আপনার বিরুদ্ধে সম্পদ গোপন করার অভিযোগ আছে। তারপর আমাকে শুনানিতে ডাকেন। শুনানিতে সব কাগজপত্র দেওয়ার পরও আমাকে বলেন, আপনার স্ত্রীর স্বর্ণের গহনাসহ বেশকিছু সম্পত্তির তথ্য গোপন করেছেন। কিছু দেন এগুলো দেখা হবে না। তার উত্তরে বলি আমি এক টাকাও ঘুষ দেবো না। আমি বিয়ের সময় স্ত্রীকে স্বর্ণের গহনা দিতে পারিনি। তারপরও বেশ কিছুদিন বিভিন্ন হয়রানির পর আমার রিটার্ন জমা নেয়। কিন্তু রিটার্নের রশিদ পেতে আমাকে আরো ছয়মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, কর মেলায় একই কর্মকর্তারা হয়রানির পরিবর্তে সহেযোগিতা করছেন। বাড়তি কোনো কাগজপত্র দেখছে না। বরং কোথাও ভুল হলে সংশোধন করে দিচ্ছেন। রিটার্ন জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রশিদও দিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি সম্মানীত করদাতা হিসেবে মেলা থেকে উপহার দিচ্ছে। তাই এমন সুযোগ মিস করছি না। প্রায় একই কথা বলেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই, সহজ ও ঝামেলা মুক্তভাবে কর দিচ্ছি। সঙ্গে করে নিচ্ছি উপহার। তবে আগামী বছর থেকে আর মেলায় আসবোন না। কারণ ঘরে বসেই অনলাইনে কর দেওয়ার সিস্টেম করেছে এনবিআর। ফলে কষ্ট করে যানজট পেরিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে কর জমা না দিয়ে অনলাইনে দিয়ে দেবো। সঠিক কাগজপত্রসহকারে জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কনফারমেশন লেটার ই-মেইলে চলে আসবে রশিদসহ। ফলে মেনুয়াল পদ্ধতির হয়রানি, ঘুষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক এহসানুল করিম জোবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, রিটার্ন না দিলে বেতন বন্ধ করে দেবে, তাই রিটার্ন দিতে মেলায় এসেছি। এখানে জিজ্ঞাসা করে সুন্দরভাবে কর দেওয়া যাচ্ছে। টাকা দেওয়ার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে, বুথ রয়েছে, ফটোকপিরও ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু দেন আপনার ফাইল ঠিক করে দেই (ঘুষ ) সেই কথা থেকে রেহাই পাওয়া গেছে।
মেলায় যেভাবে করদাতাদের সহযোগিতা করেছে এনবিআরের কর্মকর্তরা। কর্মকর্তাদের ঠিক সেই পরিবেশ এনবিআরের সব অফিসগুলোতে সারাবছর বজায় রাখে তার জন্য নির্দেশনা দিয়েছ এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি জায়গায়, প্রত্যেকটি অফিসে করদাতারা যাতে হয়রানি ছাড়াই নির্ভয়ে, স্বাচ্ছন্দ্যে কর পরিশোধ করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কোনোভাবেই হয়রানি বরদাশত করা হবে না।
সপ্তাহব্যাপী চলা আয়কর মেলায় এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৯ জন মানুষ সেবা নিয়েছেন। তার মধ্যে নতুন করে ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩২ হাজার ১০ জন। আয় কর দিয়েছেন ৪ লাখ ১২ হাজার ১৯৬ জন। তাদের আয়করের পরিমাণ ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৩ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৮
এমএফআই/এএটি