দীর্ঘদিন ধরেই এলপি গ্যাস ও সিলিন্ডারের সঠিক ব্যবহার ও সুরক্ষার উপায় সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরাপদ নিবাস’ ও ‘নিরাপদ কর্মস্থল’ ক্যাম্পেইনের কথা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ শামসুল আলম। এলপি গ্যাসের ব্যবহার বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত, নিয়মাবলী, সাবধানতার কৌশল তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব ডিভিশন (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মীর টি আই ফারুক রিজভী।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ শামসুল আলম বলেন, দেশের যত উন্নয়ন হবে এনার্জির প্রয়োজন তত বাড়বে। আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস কমে আসছে, সেই জায়গাটি দখল করে নিচ্ছে এলপি গ্যাস।
তিনি বলেন, জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা সবসময় সরকারের একার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এজন্য ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসা উচিত। বসুন্ধরা গ্রুপ সেই কাজটি করছে বলে আমরা তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, বিভিন্ন সময় পত্রিকার পাতা ওল্টালে, টিভি খুললে খবর দেখা যায়—সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এ তথ্যটা ভুল। বিগত সময়ে আমার অধিদপ্তর থেকে বা আমি নিজেও যখন পরিদর্শনে গিয়েছি, তখন দেখা গেছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনাতেই আমরা দেখেছি পুরো সিলিন্ডারই অক্ষত থাকে।
তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনায় অধিকাংশ সময়ে ভিকটিম হন নিম্ন আয়ের মানুষ। যারা ছোট্ট একটা ঘরে ৭/৮ জন একত্রে থাকেন। কেউ একজন রাতে হয়তো চুলাটা বন্ধ করলো ঠিকই, কিন্তু সিলিন্ডারের রেগুলেটর বা ওয়াশার ঠিকমতো বন্ধ না করার ফলে হালকা গ্যাস জমে তাতে সকালবেলা আগুন লাগার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। চুলা বন্ধ করলেও রেগুলেটর লিকেজের ফলে এমনটা হতে পারে। আবার অনেক সময় ইঁদুর এসে সিলিন্ডারে থাকা পাইপটাও কেটে দেয়। এসব বিষয়ে একটু নজর রাখলেই দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মশালার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস লিমিটেডের হেড অব ডিভিশন (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মীর টি আই ফারুক রিজভী। তিনি বলেন, এলপি গ্যাস কী এবং এর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা, গ্যাসের ব্যবহার ও সুবিধা, বাসা-বাড়ি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা ও সিলিন্ডার স্টোরেজের জন্য স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি, সিলিন্ডার লোড-আনলোড ও সঠিকভাবে পরিবহন ও স্থাপনের নিয়মাবলী, লিকেজ শনাক্ত করার প্রাথমিক উপায় এবং কেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাস সবচেয়ে নিরাপদ তা জানিয়েই কর্মশালার আয়োজন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৪০টি জেলার প্রায় ৪ লাখ পরিবারের মধ্যে সফলভাবে সচেতনতামূলক কর্মশালা করা হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা থেকে কর্মশালা আবারো শুরু হচ্ছে। এলপি গ্যাস ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য ঝুঁকি ও সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণে পুরো দেশজুড়ে এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
বসুন্ধরার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন হেড অব ডিভিশন (বিজনেস ডেভলপমেন্ট, সেক্টর-এ) জেড এম আহমেদ প্রিন্স, ম্যানেজার ব্র্যান্ড সজীব রাজ বর্মণ এবং চিত্রনায়ক ইমন।
জেড এম আহমেদ প্রিন্স বলেন, শুধু বিক্রি নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা এ কর্মশালার আয়োজন করেছি। একইসাথে বাসা-বাড়ির পাশাপাশি কর্মস্থলও যেন নিরাপদ থাকে সে জন্য আমরা ‘নিরাপদ কর্মস্থল’ নামেও আলাদা কাজ শুরু করেছি। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, এখন পর্যন্ত উৎপাদন বা বিপণনে আমাদের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। যে দু’একটি দুর্ঘটনা ঘটে তা গ্রাহকদের সচেতনতার অভাবে ঘটে। আমরা চাই সেটিও বন্ধ হোক।
চিত্রনায়ক ইমন বলেন, কোম্পানি ব্যবসা করে, টাকা কামায়, এটাই তাদের প্রাপ্তি ও কাজ। তবে বসুন্ধরা শুধু এতেই খুশি নয়। তারা গ্রাহকদের কথা ভাবছে, মানুষের জীবন নিয়ে ভাবছে, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বসুন্ধরার এলপি গ্যাস এমনিতেই যথেষ্ট নিরাপদ, তবুও তারা আরো সহজ করে মানুষকে সচেতনতার বিষয়গুলো বোঝাতে চায়। এজন্যই বসুন্ধরা এলপি গ্যাস নাম্বার ওয়ান।
গ্যাস সিলিন্ডারে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করা হয় না কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান অতিথি শামসুল আলম বলেন, বিধি অনুযায়ী প্রতিটি সিলিন্ডারের একটি পুনঃপরীক্ষার তারিখ থাকে, যা প্রতি ১০ বছর পরপর করতে হয়। এটা উৎপাদনের সময় থেকেই নির্ধারণ করা হয়, অর্থাৎ উৎপাদনের পর থেকে ১০ বছর সেটি নিরাপদ।
এ বিষয়ে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের মীর টি আই ফারুক রিজভী বলেন, বসুন্ধরা এলপি গ্যাসে উৎপাদনের তারিখ, সিরিয়াল নম্বর সবকিছুই দেওয়া থাকে। একইসাথে উৎপাদন এবং প্রকিয়াজাতের পরও আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি, তারপরই এটি গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ