ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘ট্যারিফ রেট অত্যন্ত খারাপ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
‘ট্যারিফ রেট অত্যন্ত খারাপ’ ভ্যাট সপ্তাহ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অন্যরা, ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ‘ট্যারিফ রেট অত্যন্ত খারাপ’। আমাদের উচিত হবে এটাকে আস্তে আস্তে বিদায় করা। এটি ডিস্টরটিং একটি ডিভাইস। ট্যারিফ রেট শুড বি কমপ্লিটলি অ্যাবোলিশ। এদের কোথাও রাখার কোনো প্রয়োজন নেই, যে পণ্যর যে দাম আছে সেগুলো সব সময় বিক্রি হবে। যেখানে দেখবেন দাম খুব বেশি সেখানে জিরো ট্যাক্স দিলেই হলো। তবে, একবারে বাদ দেওয়া দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এর পরিবর্তে আমাদের প্রকৃত ‘ভ্যালু এডেড ট্যাক্স’ বা ভ্যাটকে যুগোপোযোগী করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) সর্বোচ্চ ভ্যাটদানকারীদের সম্মাননা বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বে যতো ধরনের উপায়ে রাজস্ব আরোহণ করা হয়, তারমধ্যে সর্বাধিক আধুনিক ও সর্বোত্তম পন্থা হলো ভ্যাট। ১৯৫৮ সালে ফ্রান্স এটা শুরু করে। বাংলাদেশে এটা শুরু হয় ১৯৯১ সালে। যখন শুরু হয় তখন মনে হয়েছিলো এটি চমৎকার বিষয়। এরপর অনেক সংস্কার ও পরিবর্তন হয়েছে। কয়েকটিতে এক্সজামশনস দিয়েছি, ইউনিফর্ম রেইটের দিকে চলে গেছি। আমাদের একটি ভ্যাট আইন তৈরি হয় ২০১২ সালে। আমরা তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আইনটি ২০২০-২১ বা ২০২১-২২ অর্থবছরে কার্যকর হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাটের সর্বনিম্ন হার ৫ শতাংশ হতে পারে। তিন স্তরের বাকি দু’টি হার হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ। এখন ১ দশমিক ৫ শতাংশও আছে, ১০ শতাংশ আছে, ৭৫ শতাংশ আছে, ৫ শতাংশ আছে। একটা বোধ হয় ৪ শতাংশ আছে। এখানেও আমরা ১৫ শতাংশ রেটে থাকবো না। ১৫ শতাংশের পরিবর্তে তিনটি রেট করতে পারি। ১৫ রাখেন, ৭ দশমিক ৫ রাখেন, ৫ রাখেন। বেশি মূল্যের পণ্যে ভ্যাট থাকবে না।

ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

দিবসটির এবারের স্লোগান ‘ভ্যাট দিচ্ছে জনগণ, দেশের হচ্ছে উন্নয়ন। জাতীয় পর্যায়ে নয় প্রতিষ্ঠান ও  ঢাকার ২১ প্রতিষ্ঠানকে অনুষ্ঠানে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তিন ক্যাটাগরিতে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ নামের নতুন ভ্যাট আইনটি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কার্যকর করতে চেয়েছিলো সরকার। তখন একক হার ১৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছিলো। ব্যবসায়ীদের পক্ষে প্রথমত এই হার কমানোর দাবি ছিলো। অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে তখন তা ১২ শতাংশে মানার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এনবিআরের অটল অবস্থা ও ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে প্রধানমন্ত্রী আইনটি দু’বছরের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দেন। সে হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কার্যকর হওয়ার কথা।

রোববার (৯ ডিসেম্বর) ভ্যাট দিবসের সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে আইনটি কার্যকর হবে। এমন সময়ে অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য এলো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন,  এনবিআরে অনেক সংস্কার হয়েছে। মানুষ কর দিতে চায় কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি ও সিস্টেমের জন্য ভয় পায়। আমি মনে করি ভয়টা দূর করা প্রয়োজন। ইউনিয়ন পর্যায়ে খানা কর নিয়ে ভাবা যেতে পারে, এনবিআর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কর নেট বাড়লে ট্যাক্স রেট বাড়বে। আমরা যে ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করি এরচেয়ে দ্বিগুণ ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয়। সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কোপ রয়েছে, স্কোপকে কাজে লাগাতে হবে। দুদক কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগী নয়, সহযোগী। আমরা সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই।

বহুল আলোচিত নতুন ভ্যাট বাস্তবায়নের আগের ঘোষণার কথা উল্লেখ করে এফবিসিসিআই’র সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ভালো হয় না। এর উদাহরণ ভ্যাট আইন। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী তখন দু’বছরের জন্য আইনটি স্থগিত করেছিলেন। তাই আমরা সবক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।

ইএফডির ব্যবহারকে আমরা স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই টেকনোলজির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এনবিআরে আরও বেশি প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমরা দুদক ও এনবিআর এক হয়ে কাজ করছি। আমাদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। উন্নত দেশে কর অনুপাত ২০ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমরাও উন্নত দেশের দিকে যাচ্ছি। ক্রমান্বয়ে সেই পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আমাদের সামর্থ্য বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা আয় করে সব কর ও ভ্যাটদান করবেন, এটা আমাদের কাম্য।

তিনি বলেন, দেশের  উন্নয়নের জন্য রাজস্ব প্রদান করি এবং আহরণ করি এ বিষয়টি জানানোর জন্য ভ্যাট দিবস। ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং আমাদের সামর্থ্য বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়:  ২৩০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৮
আরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।