ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এফটিএ-তে ১০ দেশ আগ্রহী, পর্যালোচনায় বাংলাদেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
এফটিএ-তে ১০ দেশ আগ্রহী, পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে বিশ্বের ১০টি দেশ আগ্রহী। তাদের আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য বা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। তবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের এ বছরই মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির আগ্রহ কমে যাওযায় বর্তমানে আলোচনা বন্ধ রয়েছে। আর চীনের আগ্রহে এফটিএ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও শিগগিরই চুক্তিটি করতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ।

অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। চুক্তির বিষয় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও গভীর পর্যালোচনা করতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এফটিএ হচ্ছে দু’টি দেশের মধ্যে চুক্তি, যার আওতায় এক দেশের পণ্য বিনা শুল্কে অন্য দেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এ ধরনের চুক্তি করে লাভবান হয়েছে। বাংলাদেশও কয়েক বছর ধরে কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ করার আলোচনা করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ দেশ শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, ব্রাজিল, চীন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য আগ্রহী। এসব দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে সুযোগ-সুবিধা এখনকার চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে।

তাছাড়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এফটিএ করার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে চীনের দেওয়া এ চুক্তি প্রস্তাবের প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। বর্তমানে প্রচুর চীনা পণ্য বাংলাদেশে ঢুকলেও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে এর পরিমাণ বাড়বে কী না, কী ধরনের পণ্য বাংলাদেশে আসবে এবং এর ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এখন।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তবাণিজ্য চুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে বাণিজ্য বাড়ানো। সে ক্ষেত্রে এমন সব দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি হওয়া উচিত, যেখানে দেশ লাভবান হবে বা উভয় দেশ লাভবান হবে। এ জন্য এফটিএ করার আগে রাজস্ব আয়, স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে কী-না, নানা বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আপাতত এ বিষয়ে আলোচনা বন্ধ রয়েছে। দেশটি কেনো জানি এ চুক্তি করতে এখন আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে চীনের এফটিএ প্রস্তাব নিয়ে এখনও পর্যালোচনা চলছে। এফটিও করার ফলে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে, সেটা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ ধরনের চুক্তি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। স্টেক হোল্ডারদের মতামতের বিষয় রয়েছে। এ ধরনের চুক্তিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে না ক্ষতির মুখে পড়বে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করা একটু সময় সাপেক্ষ বিষয়। আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়গুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চাই। যদি আমরা এফটিএ চুক্তি করতে পারি, তবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াসহ সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত ভালো পদক্ষেপ। এ ধরনের চুক্তি করার আগে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করতে পারলে আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। সরকারের উচিত স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার আগেই মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে নেওয়া। তাহলে এলডিসি হিসেবে যে সুবিধা পাই, তা বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে।

এদিকে, ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে কোনো দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য করতে হলে বাংলাদেশের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। কারণ শুল্কমুক্তভাবে পণ্য ঢুকে স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কী না তা ভালোভাবে বিবেচনায় আনতে হবে।  চুক্তির ফলে ফরেন ইনভেস্টমেন্ট বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই চুক্তির ফলে কোন ধরনের পণ্যের আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি পাবে, তা সরকারি কর্মকর্তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন রয়েছে। একইসঙ্গে চীনের বেলায় বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ কম। কারণ চীন থেকে বাংলাদেশের আমদানি অনেক বেশি। আবার চীন অনেক কম দামি পণ্য তৈরি করে। ফলে এতে দেশের শিল্পের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য আমদানি-রফতানি ও রাজস্বের কথা বিবেচনা করে এগোতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
জিসিজি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।