মোবাইল ফোন রিচার্জ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবার বিলের পাশাপাশি ঘরে বসে পরিশোধ করা যাচ্ছে ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনা পণ্যের দাম। আর এসব কিছুই সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের চালু থাকা হিসাব ৭৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ৩ কোটি ৭৩ লাখ বেড়েছে।
মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, সরকারি বিভিন্ন দফতরের বিল ও অন্যান্য সেবামূল্যের ফি পরিশোধের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের বেতন দিতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যেকদিন গ্রাহকরা ১ হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ ও একে অন্যদের কাছে পাঠাচ্ছে।
এছাড়াও মোবাইল ফোনের টক-টাইম রিচার্জ, ইউটিলিটি বিল, ডিজিটাল সেবার বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। এসবের পাশাপাশি ই-কমার্সে ব্যবসায়ীদের বিল দেওয়ার মোবাইল অ্যাপস জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক লেনদেন চালু করার জন্য শিগগিরই একটি নীতিমালা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একই স্থানে একাধিক কোম্পানির এজেন্ট না থাকলেও চলবে। এভাবে শুরু করা গেলে কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক কমে যাবে। ভোগান্তিও কমে যাবে।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লিখিত সেবার পাশাপাশি নতুন নতুন সেবা চালু করছে। এরমধ্যে রাইড শেয়ারিং সেবার বিল, স্কুলের টিউশন ফি, সরকারি উপবৃত্তির অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে। এসব খাত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসায় লেনদেন বেড়েছে ২০ শতাংশ।
এদিকে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দিনে ১৫ হাজার টাকা বেশি ক্যাশ ইন এবং ১০ হাজার টাকার বেশি ক্যাশ আউট বন্ধ করা হয়।
দেশে রেমিটেন্স আনার ক্ষেত্রে পার্টনার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে কাজ করায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করে বিকাশ। বর্তমানে বিকাশ মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে আসা রেমিটেন্স বিকাশের মাধ্যমে সারাদেশের গ্রাহকদের হিসাবে জমা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
শুধু লেনদেন এবং ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে এমন নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এই ধরনের সেবা অন্যান্য আর্থিক সেবার ক্ষেত্রেও সূচক বৃদ্ধি করেছে।
মোবাইল ব্যাংকিয়ে এসব সেবা প্রদানে বর্তমানে ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭৩টি এজেন্ট রয়েছে। এক বছর আগেও এজেন্টের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৪৫৯টি। এক বছরের ব্যবধানে এজেন্টের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ১৪টি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭৫ লাখে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে হিসাবের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৮৮ লাখ। এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব বেড়েছে ৮৭ লাখ। এসব হিসাবের মাধ্যমে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে লেনদেনের পরিমাণ ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য ২৮টি ব্যাংককে লাইসেন্স প্রদান করে। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। কিন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের রকেট। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের দখলে বাজারের ৯৪ শতাংশ।
তবে, নতুন করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের নগদ। তাদের লেনদেন সীমা দৈনিক ৫০ হাজার টাকা রয়েছে।
বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, সুপারশপ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার মুদি দোকানেও পৌঁছে গেছে বিকাশ। আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠানে বিকাশের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট এবং ক্যাশলেস সোসাইটি আস্তে আস্তে শুরু হচ্ছে। সরকার এক্ষেত্রে যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০২২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
এসই/আরআর