ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায়ে খেলাপিদের সুবিধা দেয়া হয়েছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৯
‘জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায়ে খেলাপিদের সুবিধা দেয়া হয়েছে’ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতেই খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

তিনি বলেন, এতে অনেকেই ধারণা করছেন যে ভালো মন্দ এক হয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো মন্দ কখনো এক হবে না।

আর যারা ভালো তাদের তো কোন এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না। তবে সবাই যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাহলে সবাই দিতে পারবে।

বুধবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ২৪তম ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
 
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ  সুযোগে দুই শতাংশ কোনো বিষয় না। দুই শতাংশ শর্ত মেনেই তারা ঐক্যমত পোষণ করবে যে তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা এ শর্ত বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি সেটা হলো কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতে। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সবাইকে টাকা দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবোই। এটা রাষ্ট্রের সব মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের রায়টি যখন আসবে তখন আমরা কার্যকর করবো। কার্যকর করতে গেলে আমাদের সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। রায়ে কিছু পরিবর্তন হবে। আমাদের কিছু বাড়তি চাহিদা আছে। আগে রায় আসুক। রায়ের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। বেশি জায়গা পরিবর্তন না মোটামুটি ভাবে ঠিক আছে। কোর্ট আর আমাদের মধ্যে কোন রকম বিরোধ নেই। আমরা একই পক্ষ। আমরা যে কাজটি করতে যাচ্ছি সেটি দেশের মানুষের জন্য জনকল্যাণের জন্য। দেশে ব্যবসা বাণিজ্যবান্ধব আইন আমরা করতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ইস্যু রয়েছে তা এক সঙ্গে করে ব্যাংকিং খাতটাকে দাঁড় করানোটাই হলো আমাদের উদ্দেশ্যে। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বার্তা হচ্ছে। আসলে আমাদেরও কোথায় কোথায় ভুল আছে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১০ এর উপরে যাবে না। এটা ৯ দশমিক ৭৫ হবে। অথ্যাৎ সিঙ্গেল ডিজিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ও বাজেটে সেটা উল্লেখ আছে। যাই হোক আমরা ব্যাংক ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ আদায় করবো। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ব্যাংক, ঋণ গৃহীতা, সরকার ও দেশের মানুষ যেন না ঠকে। সে কাজ করতে হলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সবাইকে সম্পৃক্ত করে এ কাজটি করতে হবে।

ব্যাংকগুলো এখনো কোনো কমপাউন্ট সুদের হার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারিনি। তবে ব্যাংকগুলো করবে। যখন আমরা রায়ের কপি হাতে পাবো। তখন বলা হবে
কমপাউন্ট সুদের হার করতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবে না। এমন কোনো ব্যাংকের অস্তিত্ব বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যদি না মানে সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। প্রয়োজনে মার্জাস করা হবে এ ধরনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সুতরাং সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না এটা হতেই পারে না। তবে যারা মানবে তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য আমাদের যে সুযোগ সুবিধাগুলো আছে তা দিয়ে সহযোগিতা করবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় হলো গতবছরই তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল। এজন্য তারা সরকারের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল সরকার তা পূরণ করেছে। এরমধ্যে অনেকেই সিঙ্গেল ডিজিটে আসছে। আবার কেউ কেউ আসেনি।
তাদের আসতে হবে না হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তারা ব্যবসা করলে লাভ করবে কেউ কম কেউ বেশি করবে।  

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থানে আসতে এদেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের তাঁতী, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, কামার, কুমার, জেলে, সাংবাদিক সবারই অবদান রয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা সৌভাগ্যবান কারণ সুন্দর সময়ের মধ্যদিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো হচ্ছে সংস্কার। বিভিন্ন খাতে আমাদের সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন পুঁজিবাজার, ব্যাংকিংখাত, ননব্যাংকিং খাত, এনবিআর, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। আমরা যদি সংস্কার না আনি  তাহলে পিছিয়ে থাকবো। অন্যান্য দেশ এসব কাজ ২৫ বছর আগে করেছে।  

সরকারি ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক এ নিয়ম মানছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি ব্যাংকও মানছে। তারাও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসছে।

ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং কমিশন যে আমরা করবো সেটা বাজেটেও বলেছি। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্ডারেই ব্যাংকিং কমিশন করবো। শিগিরই করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
জিসিজি/আরআইএস/


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।