ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক মণ পেঁয়াজ কাটলে ৭০ টাকা! 

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এক মণ পেঁয়াজ কাটলে ৭০ টাকা!  পেঁয়াজ কাটছেন বাচ্চি বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

ঈশ্বরদী (পাবনা): বয়স পয়ষট্টি পেড়িয়ে গেলেও মানুষটিকে দেখে ঠিক তেমন বোঝা যায় না। সংসারে ঠিকমতো হাঁড়ি ওঠে না তাই 'সস্তা শ্রমিক' হিসেবে বসে বসে পেঁয়াজ কাটছেন বাচ্চি বেগম। এক মণ পেঁয়াজ কাটলে মেলে ৭০ টাকা, আর এই এক মণ পেঁয়াজ কাটতেই গড়িয়ে যায় বেলা। 

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের হাডিঞ্জ ব্রিজ এলাকায় এ-চিত্র দেখা যায়।  

বাচ্চি বেগমের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরাও।

দীপ্তী, শিখা, পিয়াংকা রাখী, সবাই পাকশী এমএস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। স্কুল ছুটি, তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে কর্মব্যস্ততা তাদেরও।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে শীতের সব্জি বা ফসল তোলাতে নারী শ্রমিকরা মজুরি বৈষম্যের  শিকার হচ্ছেন। পরিবারে অভাব থাকায় সুবিধাভোগী ক্ষেত মালিকরা অতি সামান্য মজুরিতে নারী ও ছোট ছোট মেয়ে শিশু শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে গড় আয়ে মাত্র দেড় থেকে দুইশ টাকায় কাজ করাচ্ছেন। পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে থাকা গুড়িপাড়ার পুরুষেরা মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। নদীতে পানি বেশি থাকায় যখন মাছ নেই, পরিবারে অভাব-ঠিক সেই মুহূর্তে নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের 'সস্তা মজুরিতে' কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। অথচ একজন নারী শ্রমিক অন্য কাজ করে দিনে আয় করেন সাড়ে ৪০০ টাকা।  

সুবিধাভোগী মহাজন আব্দুল লতিফ জানান, তিনি রেলওয়ে জমি লিজ নিয়ে ২ বিঘা জমিতে দেশি পেঁয়াজ আবাদ করেছেন, পৌষের শীতের কনকনে ঠাণ্ডায় তেমন কাজ নেই। পরিবারের অভাব পূরণ করতে ১০ ঘণ্টা কাজ করে তারা যে টাকা আয় করছেন, এতে তাদের পরিবারে কিছুটা উপকার হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে তারা ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা নিয়ে যায়।

ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ কাটছেন শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের এমএস কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাখীমনি (১০) বাংলানিউজকে বলে, আমরা স্কুলে পড়ি, এক মাস ক্ষেতে কাজ করলে যে টাকা হবে তা দিয়ে খাতা কলম, নতুন ড্রেস হয়ে যাবে। কয়েকদিন পর নতুন ক্লাস শুরু হবে।  

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী স্বপ্না (৮)। বাবা মনা পেশায় মৎস্যজীবী। বাংলানিউজকে স্বপ্না জানায়, বাবার আয়ে চলে আমাদের সংসার, এখন নদীতে মাছ নেই, এটুকু না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সারাদিনে ৭০ থেকে ১৪০ টাকা আয় করে মায়ের হাতে দেই। আমরা নিজেদের ইচ্ছাই এসেছি, স্কুল ছুটি এবং বাড়ির পাশে বলেই কাজ করছি।  
 
একই ক্ষেতে কর্মরত শ্রমিক মিরাজ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা পেঁয়াজ তুলে সারাদিনে আয় করে সাড়ে ৪শ টাকা। অথচ ছোট ছোট মেয়েরা একই সময় বসে কাজ করে অর্ধেক টাকাও পায় না। এভাবেই প্রভাবশালী ক্ষেত মালিকরা শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নারী ও শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।  

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক নাজমুল হক বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সোমবার  (২৩ডিসেম্বর) তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে টানা কয়েকদিন কুয়াশা থাকবে। তাপমাত্রা বাড়বে শীত কিছুটা কমবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।