ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ চায় বিসিআই 

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ চায় বিসিআই 

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা ও করপোরেট কর হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। 

একই সঙ্গে তরুণদের উদ্যোগে অর্থায়নের জন্য বাজেটে পুনরায় বিশেষ তহবিল গঠন এবং সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বিতরণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে বিশেষ করে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করে এর উন্নয়নে বিশেষ শুল্ক-কর সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষ ২০২০-২০২১- এর অন্যতম লক্ষ্য অনুযায়ী তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে এবং স্বাবলম্বী তরুণ সমাজ গঠন করতে ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি, একটি দক্ষ ও কর্মঠ যুবসমাজ তৈরি করতে প্রতি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্বল্প ও অদক্ষ তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানায় সংগঠনটি। যাতে করে সরকার, সাধারণ জনগণ এবং বেসরকারিখাত এ অবস্থা উত্তরণে সহায়ক নীতিমালা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সুফল পেতে পারে। এজন্য আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে অর্ন্তভূক্তির জন্য বাজেট প্রস্তাবনা প্রণয়ন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে পেশ করা হয়েছে।

মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে এবং সর্বনিম্ন সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা। মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য নূন্যতম ৫ বছর কর অবকাশ প্রদান করা পরবর্তী সময়ে বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করা। ২০ কর্ম দিবসের মধ্যে সকল প্রকার ইউটিলিটি সংযোগ প্রদান এবং রেয়াতি হারে সংযোগ ও সরবরাহের সংস্থান করা।

কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৫ শতাংশ শারিরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের শ্রমিক নিয়োগ করলে বিশেষ কর সুবিধা। বেজা, বিসিক ও অন্যান্য সেক্টরে তরুণ শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ মূল্যে জমি বরাদ্দ রাখা। প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়নের জন্য সব ধরনের বিনিয়োগে বিশেষ কর সুবিধা।

স্কিল ডেভেল্পমন্টের জন্য সব ধরনের বিনিয়োগ করমুক্ত রাখা। অপ্রচলিত বা নতুন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ কর সুবিধা ও নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা। ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক যৌথ প্রতিষ্ঠানগুলিকে বন্ডেড-ওয়্যারহাউজ সুবিধা প্রদান করা।

লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উন্নয়নে বিসিআইয়ের সুপারিশগুলো হলো:
কাঁচামাল আমদানিতে উৎসে কর প্রত্যাহার এবং উৎপাদিত পণ্যের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার করা। স্থানীয় উৎপাদিত মূলধন যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রয় ভ্যাট এবং বিক্রয় কর প্রত্যাহার করা। সমস্ত ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি) বিল থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার। আমদানি শুল্ক সকল মূসক নিবিন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মুসক ফরমে ঘোষিত সমূদয় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ওপর আরোপিত ১ শতাংশ এর অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ করা। সকল মূসক নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠানই যেন তাদের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত সুবিধা ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। আন্ডার ইনভয়েস এবং মিস ডিক্লারেশন-এর মাধ্যমে পণ্য আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিয়মিতভাবে মূল্যের খাত ভিত্তিক ডাটা আহরণ এবং সকল বন্দরে স্ক্যানার ও স্বয়ংক্রিয় পরিমাপক স্থাপন করা।

মূল্য সংযোজন করের (মূসক) ক্ষেত্রে প্রস্তাবনাগুলো হলো:
শিল্প খাতের টার্নওভার করের সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী অর্থবছরের আয়কর নির্ধারণকালে অনুমোদিত টার্নওভারের ভিত্তিতে দাখিলপত্রে প্রদর্শিত টার্নওভারের পরিমাণ হিসাবে গণ্য করা অত্যাবশ্যক। আমদানিকৃত কাঁচামালরে ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহার। উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ ব্যক্তির করযোগ্য পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে  মূল্য সংযোজন ৩০ শতাংশ হিসাবে গণনা করে তার ওপর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ সরবরাহ মূল্যের ওপর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ এবং করযোগ্য সেবার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন ৪০ শতাংশ হিসাবে গণনা করে তার ওপর ১৫ শতাংশ র্অথাৎ সরবরাহ মূল্যের ওপর ৬ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা অত্যাবশ্যক।

রপ্তানি খাত সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে :
রপ্তানি খাতে উৎসে কর ০.০১ শতাংশ এ নির্ধারণ করা। সকল রপ্তানি খাতে করপোরেট কর হার সমতায়ন না করে বিদ্যমান বৈষম্য বহাল রাখা হয়েছে যা কর নীতির পরিপন্থী। এজন্য সকল রপ্তানি খাতের করপোরেট কর হার সমান ১০ শতাংশ হারে ধার্য্য করার প্রস্তাব করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

আয়করের ক্ষেত্রে ববিসিআইয়ের প্রস্তাবগুলো হলো:
ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা। আয়করের সর্বনিম্ন হার ১০ শতাংশ হতে ৫ শতাংশ হারে নামিয়ে এনে নিম্ন আয়ের করদাতাকে কর-শনাক্তকরণ পরিচয় পত্র প্রদান করে উৎসাহিত করা। শিল্প ক্ষেত্রে মূসক ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি। রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে প্রণোদনা প্রদান এবং ট্রেডিং কোম্পানির তুলনায় নিম্নহারে কর্পোরেট কর আরোপে প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখার জন্য শুধু ঢাকা বা চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক না করে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে উৎসাহিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি।  

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর, মূসক ও শুল্ক সর্ম্পকিত সকল অভিযোগ, বিরোধসহ মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহন করা আবশ্যক।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) দেশের শিল্প খাত প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র জাতীয় সংগঠন। বিসিআই তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২০
জিসিজি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।