ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এক লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
এক লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক

ঢাকা: কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারিতে চলমান নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব ও চলাচলে সীমাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের দিনমজুর এবং অতি দরিদ্ররা। ইতোমধ্যেই জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে লক্ষাধিক বাংলাদেশির। দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার যোগান দিতেই তারা সম্মুখীন হচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার।

এ প্রতিকূল অবস্থায় কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে এবং তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে গ্রামীণফোন ও ব্র্যাক। পাশাপাশি, এ মহতী উদ্যোগে সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়াতে যৌথ প্রচেষ্টায় তারা শুরু করেছে ‘ডাকছে আমার দেশ’ উদ্যোগ।

শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) এক অনলাইন সংবাদ সম্মলনের মাধ্যমে উদ্যোগের ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ব্র্যাকের কমিউনিকেশন অ্যান্ড আউটরিচ ডিরেক্টর মৌটুসী কবির এবং গ্রামীণফোনের সাসটেইনিবিলিটি প্রজেক্ট লিড এম. হাফিজুর রহমান খান।

অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তা নিয়ে সামনে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু, জাতীয়ভাবে এ দুর্যোগের বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের ৬৪ জেলায় নিম্নআয়ের ২ হাজার ৬৭৫ জন মানুষ নিয়ে ব্র্যাকের পরিচালিত জরিপে উঠে আসে, নিম্নআয়ের ১৪ শতাংশ পরিবারের বাসায় খাবার নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায়ে সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭২ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কাজ হারিয়েছেন কিংবা তাদের কাজের সুযোগ কমেছে।

এক্ষেত্রে ‘ডাকছে আমার দেশ’ যুথবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং মহৎ উদ্দেশ্যে গণ তহবিল সংগ্রহে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে অবদান রাখায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

গ্রামীণফোন ব্র্যাকের জরুরি খাদ্য সহায়তা তহবিলে ১৫ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে। যা ব্র্যাককে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ পরিবারের কাছে সাহায্য পৌঁছাতে সহায়তা করবে। এ উদ্যোগে প্রতি পরিবারকে ১৫শ’ টাকা করে দেওয়া হবে। এ টাকা দিয়ে চার সদস্যের একটি পরিবার অন্তত দু’ সপ্তাহের জরুরি খাবার কিনতে পারবে।

‘ডাকছে আমার দেশ’ উদ্যোগটি নিয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘এটি একটা বৈশ্বিক সঙ্কট। এখনই সময় সরকারি-বেসরকারি খাতকে এক সাথে সামনে এগিয়ে এসে কোভিড-১৯ এর দুর্যোগ মোকাবিলা করা। যৌথ প্রচেষ্টায় একসাথে শক্তিশালী হওয়ার মাধ্যমে সমাজে ইচিবাচক প্রভাব ফেলতে আমরা শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামীণফোন আজ ব্র্যাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তার জন্য, আমি সামর্থ থাকা সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করবো ‘ডাকছে আমার দেশ’ উদ্যোগ অথবা সরকারি সংস্থাগুলোর নেওয়া অন্য উদ্যোগগুলোর সাথে যুক্ত হতে। এ সঙ্কটকালীন সময়ে আমরা একসাথে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবো; যাদের এ মুহূর্তে বেশি সহায়তার প্রয়োজন। ’

‘এ প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলায় সকারকে সহায়তায় গ্রামীণফোন এ উদ্যোগ ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এটুআই, বিটিআরসি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফের সঙ্গে সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। ’

ইয়াসির আজমান আরও বলেন, ‘আমরা সকল চিকিৎসক, নিরাপত্তা রক্ষীবাহিনী, সেনাসদস্য, স্বেচ্ছাসেবীদের এবং আমাদের সহকর্মীদের আবারো ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা এই সঙ্কটকালীন সময়ে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়েজিত আছেন। আমরা যোদ্ধা জাতি; এ জাতির রয়েছে অপরিসীম সাহস ও প্রাণশক্তি, আমরা এটা অতীতেও প্রমাণ করেছি, এবং ভবিষ্যতেও আবার প্রমাণ করবো। ’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘এটি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য নিয়ে বৈশ্বিক মহামারিই নয়, এটা মানবিক সঙ্কট। এ মুহূর্তে জাতির আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ১ লাখের বেশি মাঠকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে ব্র্যাক মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধি, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, পিপিই সরবরাহ এবং মানুষের প্রয়োজনে জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমরা সরকারকে সহায়তা করে যাচ্ছি। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ২ লাখ পরিবারের সহায়তায় ৩০ কোটি টাকা সহায়তায় অঙ্গীকারবদ্ধ। গ্রামীণফোনের মহৎ উদ্যোগ ও সহায়তা আমাদের বিস্তৃত পরিসরে কাজ করতে সাহায্য করবে। বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা—বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী কিংবা স্তন্যদানকারী মা, বিশেষভাবে সক্ষম মানুষ, নারী উপার্জনকারীর ওপর নির্ভরশীল পরিবার, অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং অন্য কোনো উৎস থেকে সহায়তা বঞ্চিত ব্যক্তি ও পরিবারকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্র্যাক নিজেদের কাজ অব্যাহত রাখবে। ’

ব্যক্তিপর্যায় ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সহায়তার মাধ্যমে এ উদ্যোগ যুক্ত হওয়া যাবে।

ব্যাংক হিসাব নাম: ব্র্যাক, হিসাব নম্বর: ১৫০১২০-২৩১৬৪৭৪০০১, ব্র্যাক ব্যাংক, গুলশান-১, গুলশান অ্যাভিনিউ, ঢাকা এবং বিকাশ নম্বর: ০১৭৩০৩২১৭৬৫।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২০
এমআইএইচ/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।