ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

করোনা: হকারদের নেই বেচাকেনা-ঈদ আনন্দ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
করোনা: হকারদের নেই বেচাকেনা-ঈদ আনন্দ ফুটপাতে ব্যবসা করছেন এক হকার। ফাইল ছবি

ঢাকা: করোনা ভাইরাস রোধে দীর্ঘ দুই মাস থেকে চলছে অঘোষিত ‘লকডাউন’। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন দেশের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম বিপদে রয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণির হকার। তাদের বেচাকেনা ও রোজগার একেবারেই বন্ধ রয়েছে। এর ফলে পরিবার নিয়ে শুধুই হতাশায় দিন কাটাছেন তারা।

শনিবার (২৩ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করা হকারের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানা যায়।

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবার ঈদের আগে হকারদের বেচাকেনা থেকে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই হকাররা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করেন।

তবে এবারের ঈদ তাদের জন্য কোনো আনন্দের না, এবারের ঈদ তাদের জন্য কষ্ট ও বেদনার। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো মতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাই যখন তাদের জন্য কষ্টকর, সেখানে ঈদ উদযাপন অকল্পনীয় বিষয়।

পল্টনের ফুটপাতে টি-শার্টের ব্যবসা করেন কামাল। তিনিসহ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন। যারা কামালের রোজগারের উপরেই নির্ভরশীল। প্রতিমাসে ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়ায় লালবাগ এলাকায় বসবাস করেন। ইতোমধ্যে তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি।  

কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাকরি-বাকরি করতে পারি না, বড় কোনো ব্যবসা করার সামর্থ্যও নেই, তাই হকারি করেই আমাদের দিন চলে। দুই মাস ধরে আমাদের কি কষ্টের মধ্যে দিয়ে যে জীবন চলছে, তা আল্লাহ ও আমরাই জানি। সরকারি-বেসরকারি এতো ত্রাণ দেওয়ার খবর শুনি, কিন্তু সেই ত্রাণ আমাদের মতো হকারের কাছে পৌঁছায় না। আমরা না পাড়ি লাইনে দাঁড়াতে, না পারি কারোও কাছে হাত পাততে।

ঈদ কীভাবে পালন করবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঈদ যে চলে আসছে সেটাইতো মনে নেই। এখন আমাদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই সব থেকে বড় যুদ্ধ। আগামীকাল কি হবে সেই চিন্তা করি না, আজ কীভাবে চলবো সেইটা চিন্তা করতে হচ্ছে। শুধু আমি না আমার মতো এমন আরও অনেক হকার আছে, যারা কষ্টের কথা বলতেও পারছে না, সইতেও পারছে না।

জাফর নামের অপর একজন হকার ফুটপাতে পাঞ্জাবি ব্যবসা করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে করোনার কারণে আমাদের ব্যবসা নেই, তাই আয়-রোজগারও নেই। এতে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে পড়ে গেছি। তিন মাসের বাসা ভাড়া দিতে পারি নাই। কিছুদিন আগে হকার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কিছু ত্রাণ পাইছিলাম তা দিয়েই চলছি, এখন আবার সমস্যায় আছি। লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারি না। ঈদের কোনো বাজার এখনও করতে পারিনি। পরিবার নিয়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করবো সেটা আল্লাহ জানে। সরকার মানুষকে অনেক সহযোগিতা করছে, আমরা কেন সেগুলো পাই না?

শুধু কামাল ও জাফর নয়, রাজধানীর অধিকাংশ হকারের জীবনেই বর্তমানে নেমে এসেছে এমন দুঃখ আর কষ্ট। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকাই এখন তাদের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

হকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মূরশিকুল ইসলাম শিমুল বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হকাররা হতাশা আর কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম ও প্রধানমন্ত্রীর গরীব মানুষদের জন্য নগদ সহায়তার মধ্যেও নেই হকারের নাম। সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমে হকারদের অন্তর্ভুক্ত করলে তারা হয়তো এ দুর্বিষহ কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পেতো।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
আরকেআর/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।