ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ট্যানারি মালিকরা বকেয়া না দিলে চামড়া কেনায় অনিশ্চয়তা

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
ট্যানারি মালিকরা বকেয়া না দিলে চামড়া কেনায় অনিশ্চয়তা চামড়া

রাজশাহী: বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও বকেয়া পরিশোধ করছেন না ঢাকার ট্যানারি মালিকরা। বিভিন্ন ঈদ মৌসুমে চামড়া কেনার পর নানান অজুহাতে দিনের পর দিন পাওনা টাকা দিতে তারা ঘোরাচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীদের।

এই অবস্থায় চরম অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদুল আজহা। কিন্তু এখন পর্যন্ত চামড়া কেনার টাকা জোগাড় করেত পারেননি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে এবারের কোরবানির মৌসুমে চামড়া কেনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তাদের।  

সার্বিক পরিস্থিতিতে চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন তারা আর্থিক প্রণোদনার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। এর বাইরে ব্যাংক ঋণের কথাও ভাবছেন। বকেয়া আদায়, আর্থিক প্রণোদনা বা ব্যাংক ঋণ না পেলে তাদের পক্ষে এবারের কুরবানি মৌসুমে চামড়া কেনা সম্ভব নয়।

রাজশাহী জেলা চামড়া গ্রুপের নেতারা বলছেন, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত বেশ কয়েক বছরের টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাদের কাছে পুঁজি যা কিছু অবশিষ্ট ছিল, তাও এই করোনাকালে ঘরে বসে খেয়ে শেষ। সব পুঁজি হারিয়ে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছেন। এ অবস্থায় নতুন করে পুঁজির সংকুলান করা তাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।  

রাজশাহী মহানগরের সপুরা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আসলাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এক বছর নয়, পর পর তিন বছরের টাকা বকেয়া পড়েছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়ার বকেয়া টাকা পাবেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তারা টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও করেনি। এক, দুই করে তিন বছরের বকেয়া পড়েছে। তাই কোরবানির মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা, ব্যাংক ঋণ ও ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ ছাড়া কেউ চামড়া কিনতে পারবে না।

একই কথা জানিয়ে মহানগরের নওদাপাড়া এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ী জাহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, এবার অর্থ সংকটে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে পারবেন না এ কথা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু, তাই বলে দেশের জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা যাবে না। যদি এমন পরিস্থিতিই শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়, তাহলে যারা কোরবানি দিচ্ছেন তারাই চামড়া লবণজাত করে সংরক্ষণ করতে পারবেন। পরিস্থিতির উন্নতি হলে পরে সে চামড়া ভালো দামে বিক্রি করবেন। লবণ দিয়ে চামড়া দীর্ঘদিন রাখলেও পচবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা পরে লাভবান হবেন।

.

এদিকে চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় ২৩ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে চলতি বছরের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮ থেকে ৩২ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা ও বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা বর্গফুট।

অন্যদিকে ২০১৭ সালে রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ারদাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ছিল ১৮ থেকে ২০ টাকা। বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা। ২০১৯ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দাম ছিল। সেই তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চামড়ার যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলায় প্রতি কোরবানির মৌসুমে ৭০ থেকে ৮০ হাজার পশু কোরবানি করা হয় জানিয়ে রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রৌফ বাংলানিউজকে বলেন, এবার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে কোনোভাবেই তারা বকেয়া টাকা আদায় করতে পারছেন না। অন্যদিকে বিভিন্ন শর্তের কারণে বর্তমানে ব্যাংক ঋণও কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে।

আবদুর রৌফ বলেন, রাজশাহীর চামড়াগুলো নাটোরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। কেউ সরাসরিও ঢাকায় নিয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করেন। এখন তারা বলছেন, সবারই টাকা বকেয়া পড়ে আছে ঢাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে। ঢাকা ট্যানারি মালিকরা এতদিন বিভিন্ন অজুহাত দেখালেও এখন করোনার কথা বলছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই টাকা শোধ দিতে পারবেন বলছেন। সব মিলিয়ে পুঁজি সংকটে পড়েছেন স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা। পুঁজি সংকটে থাকার কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা এ বছর চামড়া কিনতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন চামড়া ব্যবসায়ীদের এ নেতা।

অর্থ সংকটে শেষ পর্যন্ত এই ঈদ মৌসুমে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে কোরবানির পর চামড়া সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান এই ব্যবসায়ী নেতাও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্ব-উদ্যোগেই চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব। সবাই একটু চেষ্টা করলেই ‘ব্লু লেদার’ পদ্ধতিতে চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে। এ জন্য মাত্র ৭০০ টাকার মতো খরচ হবে। ১৪ ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে পশুর চামড়া ড্রামের মধ্যে সংরক্ষণ করা যাবে। একটি ড্রামে প্রায় সাত থেকে ১০টি চামড়া সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতিতে কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত বছর চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে চামড়া সংরক্ষণ করলে সংশ্লিষ্টরা পরে সুবিধাজনক সময়ে ভালো দামে চামড়াগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এবং শেষ পর্যন্ত লাভবান হবেন বলে উল্লেখ করেন আবদুর রৌফ।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২০
এসএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।