ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকায় বিপাকে ক্যাবল অপারেটররা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকায় বিপাকে ক্যাবল অপারেটররা ...

ঢাকা: স্যাটেলাইট টেলিভিশন সম্প্রচারের লাইসেন্স নবায়ন না করায় বিপাকে পড়েছেন দেশের প্রায় দেড় হাজার ক্যাবল অপারেটর। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্যাবল অপারেটরদের কাছ থেকে আদায় করছে বিপুল অংকের জরিমানা।

জরিমানা দিয়ে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ থাকলেও অনেকের কাছ থেকে ফি নিচ্ছে না নবায়ন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টেলিভিশন।

এ ব্যাপারে ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

ক্যাবল অপারেটরদের অভিযোগ, বিভিন্ন কারণে যারা সময়মত তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি তারা নাবায়নের জন্য বিটিভির কন্ট্রোলার/লাইসেন্স ম্যানেজারের দপ্তরে যোগাযোগ করলেও নবায়নের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

তারা বলেন, ৩১ আগস্টের পর থেকে নবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ। কোনো ফি জমা নেওয়া হচ্ছে না। কিসের ভিত্তিতে, কেন এটা করা হচ্ছে তাও অবহিত করছে না বিটিভি লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ।

কোয়াব সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ৫ হাজার ক্যাবল অপারেটর রয়েছে। এদের মধ্য থেকে ৭৩১ ক্যাবল অপারেটর এবং ৭০১ জন ফিড অপারেটর আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি। তারা এখন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ অনুসারে দুই বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। লাইসেন্স ফি বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা করে। আর ফিড অপারেটরদের (যারা ক্যাবল অপারেটরদের কাছ থেকে সংযোগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেন) তাদের ফি বিভাগীয় পর্যায়ে বার্ষিক ১৬ হাজার, জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬ হাজার টাকা করে।

আইন অনুসারে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করা না হলে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে জারিমানা দিতে হয়। যারা ইতোমধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি তারা জরিমানা দিয়ে নবায়ন করতে চাইলেও এখন পারছেন না।

এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করে কোয়াব-এর পক্ষ থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো এক পত্রে বলা হয়, বাংলাদেশে টেলিভিশন শিল্প বিকাশে ক্যাবল অপারেটরদের ভূমিকা অপরিহার্য। আমরা বিগত ২৫ বছরে তিলে তিলে অনেক কষ্ট করে এই ক্যাবল টেলিভিশন শিল্পকে দাঁড় করিয়েছি। আমাদের এই ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে দেশে আজ বাংলাদেশি ৩৪টি টিভি চ্যানেল পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের ক্যাবল অপারেটর ও ফিড অপারেটরদের বিটিভি থেকে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক। আমরা বেশিরভাগ ক্যাবল অপারেটর বিটিভির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অনেক ক্যাবল অপারেটর আর্থিক টানাপোড়েন ও অবহেলাজনিত কারণে লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেনি। যার ফলে প্রায় দেড় হাজার ক্যাবল অপারেটর লাইসেন্স নবায়নের জন্য অপেক্ষায় আছেন।

রাজধানীর মগবাজার নয়াটোলা-আমবাগান এলাকার একজন অপারেটর অভিযোগ করে জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে তাকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। অথচ তার বার্ষিক লাইসেন্স ফি ১৬ হাজার টাকার সঙ্গে ভ্যাট ও সারচার্জসহ প্রায় ২০ হাজার টাকা আসার কথা।

তিনি বলেন, এমনিতেই ব্যবসার অবস্থা খারাপ, এর মধ্যে এত টাকা জরিমানা, ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে গেলে ব্যবসাই করা যাবে না। পাশের চেয়ারম্যান গলির আরেক অপারেটরকে জারিমানা করেছে ৫০ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অপারেটর জানান, তাকে জরিমানা করার পর তিনি বিটিভির কন্ট্রোলার/ লাইসেন্স ম্যানেজারের দফতরে লাইসেন্স নবায়নের জন্য যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয়েছে, ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করে নবায়নের আবেদন পত্র বিটিভির ডিজি বরাবরে ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতে।

এই নিয়মের কারণে চিঠি ঠিক মতো পৌঁছালো কি না, না পৌঁছালে সে জন্য আরো কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ওই ক্যাবল অপারেটররা।

এ বিষয়ে জানাতে চাইলে বিটিভির কন্ট্রোলার/লাইসেন্স ম্যানেজার জুলফিকার রহমান কোরাইশী বলেন, যারা দীর্ঘ দিন ধরে লাইসেন্স নবায়ন করছে না ২৮ আগস্টের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে একটি ঘোষণা আগেই দেওয়া হয়েছে।

লাইসেন্স নবায়ন ফি জমা না নেওয়া প্রসঙ্গে লাইসেন্স ম্যানেজার জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে থাকার পর তিনি মঙ্গলবারই (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম অফিস করছেন।

এ ব্যাপারে কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, কেউ লাইসেন্স যথাসময়ে করতে না পারলে আইন অনুযায়ী নির্ধারিত জরিমানাসহ সমুদয় ফি যেকোনো সময় জমা দিয়ে নবায়ন করা গেছে। কিন্তু এখন একদিকে নবায়নের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, অপর দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করছে। তাদের জরিমানার পরিমাণ এত বেশি যে, সেটা ব্যবসা করে ওঠানোও সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ক্যাবল ব্যবসায়ে এমনিতেই দুর্দিন চলছে। সারা দেশের ক্যাবল ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় সুমন দাস নামের এক চাঁদাবাজের অত্যাচারে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে ক্যাবল অপারেটরের। আর্থিক সংকটের পড়ে ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় এই ব্যবসা এবং এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৫ লাখ মানুষের জীবিকার স্বার্থে এটাকে অবিলম্বে শিল্প ঘোষণা করা উচিত। একই সঙ্গে অতি দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের ব্যবস্থা করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২০
এসই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।