ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

এমএফএসে ইন্টার-অপারেবিলিটি চান মোস্তাফা জব্বার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২১
এমএফএসে ইন্টার-অপারেবিলিটি চান মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা: মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্র্ভিস বা মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে ইন্টার-অপারেবিলিটি চালুর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এ প্রতিবন্ধকতার কারণে মাঝারি ব্যবসা বিকশিত হতে পারছে না।

শনিবার (৮ মে) টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারিত্বে প্রেক্ষাপট: প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাজারে এককভাবে যাতে কেউ নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারে সেজন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, প্রতিযোগিতা অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবো কিন্তু মনোপলি বা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হতে দেবো না।

এমএফএস লেনদেনে ইন্টার-অপারেবিলিটি চালু এবং দৈনিক লেনদেন ২৫ হাজার টাকার সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এ প্রতিবন্ধকতার কারণে মাঝারি ব্যবসা বিকশিত হতে পারছে না।

 মন্ত্রী এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এমএফএস এর বিকাশে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে যথাযথ সময়োচিত ব্যবস্থা নিতে হবে।  

তিনি বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। প্রতিযোগিতা না থাকলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ। প্রতিযোগিতা থাকবে কিন্তু সেখানে মনোপলি থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকিং লেনদেনের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেও লেনদেনে প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়। করোনাকালে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বেশির ভাগ লেনদেন মোবাইল সার্ভিসে হচ্ছে। মোবাইল লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতামুক্ত হলে এটিও পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

চীনে আলিবাবার মতো জায়ান্টের মনোপলি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়েছে বলে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি প্রতিযোগিতা কমিশনকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার জন্য আপনারা অপেক্ষা করবেন না। তাই কেউ যেন এমএফএস বাজারে মনোপলি করতে না পারে, সে বিষয়টি আপনারা লক্ষ্য রাখবেন।

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কেউ ২০ টাকা, কেউ ১৪ টাকা নিচ্ছে। এটা সে তার প্রতিষ্ঠানের হিসাব করে নির্ধারণ করছে। আমি এমএফএস-এর সর্বোচ্চ চার্জ নির্ধারণ করার পক্ষে, সর্বনিম্ন চার্জ নির্ধারণের পক্ষে না। কারণ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা থাকলে কেউ বেশি নিতে পারবে না। তাতে জনগণ উপকৃত হবে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, চার্জ কমালে মার্কেট নষ্ট হবে, এটায় আমি একমত নই। সরকার একটি রেট পুননির্ধারণ করে দিতেই পারে। এ বিষয়গুলো জনস্বার্থে করতে হবে।

তিনি বলেন, হিসাব-নিকাশ কতটুকু যায় আমার জানা নেই। তবুও একটি সুন্দর সমাধানে যাওয়া উচিত যে কত টাকা আয় হয়, কত টাকা রেভিনিউ শেয়ারিং সরকারের পাওয়া উচিত কোন খাত থেকে সেগুলো বিবেচনায় রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএসডি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জামান দিদার বলেন, আমরা ২০১১-২০১২ সালে একটা সেইলিং দিয়েছিলাম, যেন এর ওপরে না যায়। এর সঙ্গে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত। সবাইকে নিয়েই প্রাইসিং। সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে কথা বলে আমরা প্রাইস সেট করি। প্রাইস হয়তো আমরা কমাতে পারবো। ইউএসএসডি-এর পরিবর্তে অ্যাপে যখন পুরো মার্কেট চলে আসবে, তখন আমরা এটা করতে পারব। আমরাও চাই যে প্রাইস কমে আসুক। এতে মানুষের উপকার বেশি হবে। গ্রাহকদের ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের উপকারে এলে আমরা প্রাইস কমাবো।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারের প্লেয়ার যারা আছে, তারা ফাউল প্লে করছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব সরকারের। পলিসি সাপোর্টের জায়গা থেকে কোনো সমস্যা নেই। মার্কেট যেন কমপিটেটিভ হয়, তাহলে ভোক্তা গ্রাহক লাভবান হয়, অন্যদিকে সাপ্লাই চেইন বা ইনভেস্টররা লাভবান হয়। আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সার্ভিস চার্জটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, ১৮ টাকার ওপরে না নেওয়ার।  

নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, হাজারে ২০ টাকা চার্জ, সারা পৃথিবীতে, উন্নত দেশগুলোতেও দেখা যাবে কোথাও এ চার্জ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সেন্ড মানি ফ্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা প্রথম থেকে ফ্রি রেখেছি। সেন্ড মানিতে আসলে কোনো খরচ নেই। মৎস্য, সমাজকল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো এমএফএস সেবা ‘নগদ’ ব্যবহার করে টাকা সাশ্রয় করছে। সরকার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। এই বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে গ্রাহকরা উপকৃত হবে।

রবির এমডি ও সিইও এবং এমটবের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুরু থেকে আমরা এমএফএসগুলো চালু রাখতে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এমএফএস এমন থাকবে না। যখন ডিজিটাল কারেন্সি চলে আসবে, তখন কোনো ডিস্ট্রিবিউটর থাকবে না। আরও কিছু খরচ কমানোর সুযোগ আছে। খরচ কমালে গ্রাহকদের জন্য ভালো হবে।


বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ বলেন, সহজলভ্যতা দিতে গিয়ে আমরা বর্তমানে এ চার্জ নিচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নতুন কোনো রেট যদি আমরা দেশের জনগণের কল্যাণে নির্ধারণ করি, তাহলে সেটা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। অর্থাৎ সেই রেট যেন অপারেটরগুলোর জন্যও ভালো হয়।

টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সভাপতিত্বে আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২১
এমআইএইচ/এসই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।