ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১১ মার্চ ২০২৫, ১০ রমজান ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইভ্যালিকে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে হবে: টিক্যাব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২১
ইভ্যালিকে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করতে হবে: টিক্যাব

ঢাকা: ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ মোতাবেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ নেওয়া ২১৪ কোটি টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়া অথবা পণ্য সরবরাহের দাবি জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।

রোববার (১১ জুলাই) দুপুরে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক।



মুর্শিদুল হক বলেন, গত ৪ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মাধ্যমে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা, ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি ও অধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসির ২০২০ (সংশোধিত ‘ অনুচ্ছেদ ৩.৩.৬ অনুসারে ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১” প্রণয়ন করে গেজেট প্রকাশিত হয়। ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১’ এর ৩.৩.২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকলে ক্রেতা-বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ পাঁচদিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে হবে’। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকাসহ সারা দেশের গ্রাহকদের হাজার হাজার অর্ডার ইভ্যালিসহ বিভিন্ন ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস ধরে ফেলে রেখেছে।

১-৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষার পরও গ্রাহকদের পণ্য বা অর্থ কিছুই ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টান্টা অপেক্ষা করেও কোন ফল মিলছে না। অথচ ‘ডিজিটল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ অনুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের পণ্য বা অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা’।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের নিকট হতে ১৮৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকার পণ্য বাকিতে গ্রহণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫ দশমিক ১৭ কোটি টাকা। বাকি অর্থ কোথায় তার কোনো হদিস নেই।  

এ অবস্থায় গ্রাহকরা তাদের অগ্রিম পেমেন্ট করা অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলসহ ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় আগামী দুই মাসে ইভ্যালি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে, দায়ের তুলনায় ইভ্যালির ব্র্যান্ডভ্যালু অনেক বেশি এসব কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু অর্থ লোপাটের অভিযোগের কোনো সন্তোষজনক উত্তর তারা দিচ্ছেন না। আমরা আশঙ্কা করছি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে ইভ্যালির দায়ের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

টিক্যাবের আহ্বায়ক বলেন, গত বছর থেকে করোনা মহামারির ফলে সারাদেশে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেকটাই স্থবিরতা নেমে আসে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন প্লাটফর্মে পণ্য কেনাকাটায় অনেকটা সুফল পাওয়া গেছে।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেশ বেড়েছে। এ অবস্থায় দুই/একটি প্রতিষ্ঠানের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হলে তা সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে’।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য সারাদেশের গ্রাহকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মেইড ইন বাংলাদেশ পণ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতেও আমরা ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করতে পারি। প্রতিযোগিতা বাড়াতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনকে দেশের বাজারে নিয়ে আসা যায় কি তা ভেবে দেখা যেতে পারে। অ্যামাজনের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমাদের প্রতিবেশী ভারত বৈশ্বিক বাজারে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানেও অ্যামাজনকে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও কিভাবে এর সুফল পেতে পারে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে টিক্যাবের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ৩ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়-

ইভ্যালিসহ যেব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অর্ডার মাসের পর মাস ধরে ফেলে রেখেছে ‘ডিজিটল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ অনুযায়ী ১০ দিনের মধ্যে সেসব অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের পণ্য অথবা অর্থ ফেরত দিতে হবে।  

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে হবে।

ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম বা প্রতরণার আশ্রয় না নিতে পারে সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে ও অভিযোগ প্রমাণ হলে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।