ঢাকা: ই-কমার্স ও ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
শনিবার (১৮ সেপ্টম্বর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি এ ছায়া সংসদের আয়োজন করে।
এ কে আজাদ বলেন, ই-কমার্স খাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নীতিমালা আরও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যে হারে বেড়েছে সেই হারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। হাজার হাজার মামলা অনেক সরকারি সমস্যা ও জনগণের অভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রতিবছর ব্যাংক খাতে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। এ টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। ব্যাংক খাতে ও চলছে নৈরাজ্য। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ই-কমার্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে ভবিষ্যতে। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে সঠিক আইনের প্রয়োগ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই-কমার্স ব্যাবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা বা আইটিইএস (ITES) হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি আলোচিত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ই-অরেঞ্জের মালিক ও তার স্বামীকে গ্রেফতারের পর ই-কমার্সের প্রতারণার চিত্র আরও দৃশ্যমান হয়।
তিনি আরও বলেন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, ব্লুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় অফার, অবিশ্বস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রহকদের কাছ থেকে হতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা আর সম্পদ রয়েছে ৬৫ কোটি টাকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাবদ ২১৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা এবং পণ্য কেনা বাবদ ১৯০ কোটি টাকা দেয়নি ইভ্যালি। এছাড়াও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি ৭টি সুপারিশ করেন। সেগুলো হলো-
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স খাতের জন্য নীতিমালা ও নির্দেশিকা রয়েছে। নীতিমালা ভঙ্গ করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, কিন্তু শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ খাতের নৈরাজ্য বন্ধে আইন প্রণয়ন জরুরি। বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনি কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিশন গঠন করা। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারণায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা। দুদক, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কীভাবে আইনি প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগণকে অবহিত করা। ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা। প্রতারণায় জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের যতোটা সম্ভব অর্থ ফেরত দেওয়া।
অনুষ্ঠানে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দল হিসেবে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির তার্কিকরা অংশ নেন। বিতর্কে জয়ী হয় বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১
এমএমআই/এমএমজেড