ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মেয়াদ শেষেও বহাল রিপাবলিক ইনস্যুরেন্সের সিইও সহিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
মেয়াদ শেষেও বহাল রিপাবলিক ইনস্যুরেন্সের সিইও সহিদ সহিদ-উল-হাসান

ঢাকা: প্রায় এক বছর আগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বহাল রয়েছেন রিপাবলিক  ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সহিদ-উল-হাসান।   ঋণ খেলাপি হওয়ায় আইডিআরএ তার চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করছে না আবার কোম্পানির পর্ষদও তাকে অপসারণ করছে না।

 

নিয়োগের মেয়াদ প্রায় একবছর আগে শেষ হলেও সহিদ-উল-হাসান অবৈধভাবে রিপাবলিক ইনস্যুরেন্সের সিইও হিসেবে বহাল আছেন। নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১০ মার্চ সহিদ-উল-হাসানকে তিন বছরের জন্য সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয় রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। চলতি বছরের ১০ মার্চ তার নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে ২৩ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএ’র কাছে তাকে আরও তিন বছরের জন্য সিইও হিসেবে নিয়োগ দিতে অনুমোদন চায় রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।

অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে যায় করোনা ভাইরাসের জন্য সরকার ঘোষিক লকডাউনেরর কারণে। তবে লকডাউন শেষে আবারও কার্যক্রম শুরু হলে আইডিআরএ জানতে পারে সহিদ-উল-হাসান ঋণ খেলাপি, তার বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা চলছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের জুন মাসে তার কাছে ব্যাখ্যা চায় আইডিআরএ। সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় আটকে আছে তার নিয়োগ নবায়নের অনুমোদন।

এদিকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়া সহিদ-উল-হাসান কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়ে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিমা দাবি ও অন্যান্য খরচের জন্য কোম্পানির কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে কোম্পানি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পাবলিক শেয়ার হোল্ডাররা লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগও করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সহিদ-উল-হাসান।

রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করে ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডে বিনিয়োগ করে পরিচালক হন। ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডকে ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ১৭৭ টাকা ঋণ দিয়েছিল ৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকায়। যার পুরোটাই এখন খেলাপি। টাকা ফেরত পেতে অর্থ ঋণ আদালতে ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের নামের মামলা করেছে ব্যাংকগুলো। সহিদ-উল-হাসান কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই মামলার ৬ নম্বর আসামি।

বিমা করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ খেলাপি ঘোষণা হলে সেই ব্যক্তি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সিইও হিসেবে নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। ২৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আইডিআএ’র পর্ষদ সভায় সহিদ-উল-হাসানের নিয়োগ নবায়নের প্রস্তাব নামঞ্জুর করার সুপারিশ কার্যতালিকায় আনা হলেও রহস্যজনক কারণে উপস্থাপন করা হয়নি। আইডিআরএ’র একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার নিয়োগ নবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক এসএম শাকিল আখতার বলেন, সহিদ-উল-হাসান ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে আমরা তার নিয়োগ নবায়ন করছি না। একজন যোগ্য মুখ্য নির্বাহী নিয়োগের প্রস্তাব পাঠাতে আমরা রিপাবলিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়েছি। তারা প্রস্তাব পাঠালে আমরা অনুমোদন দিয়ে দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২১
এসই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।