ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আরেক ইভ্যালি ‘আঁখি সুপার শপ’! 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২২
আরেক ইভ্যালি ‘আঁখি সুপার শপ’! 

সিলেট: ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির মতো দ্বিগুণ অফার দিয়ে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে ‘আঁখি সুপার শপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।  

শতাধিক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পলায়নের ঘটনায় ভোক্তভোগীরা সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

অনেকে আদালতের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন।

এরই মধ্যে কোম্পানির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে আদালতে। মামলা দুটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, একটি পণ্য কিনলে আরেকটি ফ্রি—এমন প্রলোভনে ফেলে সিলেট থেকে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নেয় ‘আঁখি সুপার শপ’। বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর বাম্পার অফার ছেড়ে কোম্পানিটি এক দিনেই কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়। এরপর শনিবার (১ জানুয়ারি) থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে উধাও হয়ে যান সংশ্লিষ্টরা। এ ঘটনায় ভোক্তাভোগীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সিলেট সদর উপজেলার বটেশ্বর এলাকার শফিকুর রহমান বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ‘আঁখি সুপার শপ’র ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, ‘পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে আঁখি সুপার শপ বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনারা কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। একটু ধৈর্য্য রাখুন... আমরা আছি... প্লিজ আমাদের কেউ ভুল বুঝবেন না। ’

রোববার (২ জানুয়ারি) এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন দুই গ্রাহক। মামলা দুটি পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শাহপরান উপশহর এলাকার বাসিন্দা মো. জিয়াউর রহমান ও মো. আশরাফ হোসেন বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার আইনজীবী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, আসামিরা অনলাইনে পেজ চালু করে প্রতারণা মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য একটি কিনলে আরেকটি ফি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তারা। মামলার বাদী আশরাফ হোসেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২০ টাকা এবং জিয়াউর রহমান ৩ লাখ ৭ হাজার ২০০ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমন শতাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
 
দুই মামলায়ই ‘আঁখি সুপার শপ’র কর্মকর্তা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনীপুর গ্রামের আসমা শারমিন আঁখি ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করা হয়। এছাড়া আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। সিলেট শহরতলির বটেশ্বর গইলাপাড়া এলাকায় আসমা ও জাহাঙ্গীরই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘আঁখি সুপার শপ’ কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে ‘একটি পণ্য কিনলে আরেকটি ফ্রি অর্থাৎ শতভাগ ক্যাশব্যাক’ অফার বলে ব্যাপক প্রচারণা করেন। তাদের প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে ২০২১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এবং তেল-দুধ ক্রয় করতে উদ্যোগী হন লোকজন। মামলার বাদীও একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন। বাদীকে প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় মেমোও দেয়। তবে সেসব পণ্য যথাসময়ে তারা পাননি। এরপর প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখতে পান।

একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কাড়াকাড়ি অফার দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এতে প্রলুব্ধ হয়ে অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটিতে জমা নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই টাকা নিয়েই তারা পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে সিলেট মহানগরের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগী গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি পালিয়ে গেছে।

এ নিয়ে মামলা হয়েছে, ঘটনাটি পিবিআই তদন্ত করে দেখবে বলেনও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২১
এনইউ/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।