ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘টেকসই অর্থনীতির জন্য জরুরি সার্কুলার ইকোনমি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
‘টেকসই অর্থনীতির জন্য জরুরি সার্কুলার ইকোনমি’

ঢাকা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার। পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু, বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা।

শঙ্কা তৈরি হচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের। আগামী প্রজন্মের জন্য জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা, বর্জ্য ও দূষণ রোধ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সার্কুলার ইকোনমি বা বৃত্তাকার অর্থনীতির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় হয়। পণ্য ব্যবহারের পর বর্জ্য সংরক্ষণ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে কার্বন নিঃসরণ কমে, দূষণের হাত থেকে রক্ষা পায় পরিবেশ। তাই টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে সাকুর্লার ইকোনমি।  

রোববার (১৬ জানুয়ারি) এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘সার্কুলার অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।  

রাজধানীর মতিঝিলের এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে তিনি বলেন, বিশ্বে এখন কেউ বর্জ্যকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেনা। এক শিল্পের বর্জ্য অন্য শিল্পের জন্য উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন, ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে বাংলাদেশের। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর সেজন্য সার্কুলার ইকোনমির বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। দেশে নির্মাণ শিল্প, টেক্সটাইল, মোটর গাড়ি, লজিস্টিকস, কৃষি, আসবাব, তেল ও গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতকে সার্কুলার ইকোনমিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে মাথাপিছু বার্ষিক প্লাস্টিক ব্যবহার মাত্র ৭ থেকে ৮ কেজি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পরিমাণ ১৩০ কেজি। পুনঃপ্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনরায় সম্পদে রূপান্তর করছে দেশটি।  

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো সার্কুলার ইকোনমি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। ইউরোপীয় কমিশন এর মধ্যে সার্কুলার ইকোনমি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। এছাড়াও চীন, ব্রাজিল, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার ইকোনমিতে রূপান্তরের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশেরও একই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে সেজন্য বর্জ্যকে ধরন অনুযায়ী আলাদা করে সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে আলাদা কোনও ডাম্পিং জোন নেই যেখানে  বর্জ্যকে আলাদা করা সম্ভব। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো.  জসিম উদ্দিন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেনম সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে কাজ করতে মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করা হবে। এই সেল সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংগঠনের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে। সার্কুলার ইকোনমি বিকাশের জন্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প অপরিহার্য। দেশে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে অনেক কাজ হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এছাড়াও এ খাত আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পের মর্যাদা পাওয়া উচিত বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন আহমেদ জানান, বর্তমানে ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। বাকি ৬০ শতাংশকেও এর আওতায় আনতে হবে। এজন্য প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ওয়ার্কিং পেপার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সুজাউদ্দিন। তিনি জানান, যে হারে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হচ্ছে, তাতে কয়েক বছরের মধ্যে মূল্যবান বিভিন্ন খনিজের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। তবে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এ বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশের বৃত্তাকার অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা আছে বলে জানানো হয় প্রবন্ধে। এই খাতকে শিল্প হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে দেশে সার্কুলার ইকোনমির বিকাশ আরও গতিশীল হবে।  

প্যানেল আলোচনায় বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট ইয়ুন জো অ্যালিসন ই বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির দিকে যাব কি না এখন তা নির্ধারণ করার সময় এসেছে।  কেননা সম্পদের অবক্ষয় শুধুমাত্র আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কিংবা প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং ভবিষ্যতকেও চরম ঝুঁকিতে ফেলবে। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়, সরকারি সংস্থাগুলোর সক্ষমতা ও সচেতনতা বাড়াতে আরও বিনিয়োগ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
 
প্যানেল আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপ-পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজান আর খান, এফবিসিসিআই’র প্যানেল উপদেষ্টা ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক। তারা বলেন, সার্কুলার ইকোনমির সঠিক বাস্তবায়নে চাহিদা ও যোগানের সমন্বয়ের জন্য অ্যাকাডেমিয়া, শিল্পখাত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন।

সেমিনারে এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, মো. হাবীব উল্লাহ ডনসহ অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২২
এসই/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।