ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ইভ্যালির লকার খুলে আমি হতাশ: বিচারপতি মানিক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
ইভ্যালির লকার খুলে আমি হতাশ: বিচারপতি মানিক কথা বলছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ের দুটি লকারের পাসওয়ার্ড না পেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সোমবার (৩১ জানুয়ারি) ভাঙা হয়েছে সেই দুটি লকার। আপনারা সবাই দেখেছেন সেখানে কী কী পাওয়া গেছে।

আমরা অবশ্যই হতাশ। আমরা আশা করেছিলাম, এখানে অনেকগুলো টাকা পাওয়া যাবে। যেহেতু সিন্দুক, সিন্দুকে টাকাই থাকে। কিন্তু আমরা সেখানেই দুই হাজার ৫শ ৩০ টাকার মত পেয়েছি, সেই কারণেই আমরা হতাশ’।

সোমবার বিকেল ৫টার দিকে ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ের দুটি লকার ভাঙা শেষে সাংবাদিকদের হতাশার কথা জানান বোর্ড চেয়ারম্যান ও আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সোমবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ের ভাঙা হয় দুটি লকার।

আদালতের নির্দেশনায় গঠিত বোর্ডের পাঁচ সদস্যই এ সময় উপস্থিত ছিলেন।  

তারা ভেবেছিলেন অনেক টাকা থাকবে। কিন্তু লকার ভাঙার পর দেখা যায়, দুই লকার মিলেছে দেড় শতাধিক বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই। প্রথম লকারে মেলেনি টাকা, দ্বিতীয় লকারে মিলেছে দুই হাজার পাঁচশ ৩০ টাকা।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলেন, ওপরে প্রথম লকার ভাঙা হয়। সেখানে আমরা পেয়েছি ১শ সাতটি চেকবই। সেখানে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। আর নিচতলার লকার ভাঙার পর সেখানে আমরা অনেকগুলো চেকবই পেয়েছি। যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সই করা পেয়েছি। আর দুই হাজার ৫শ ৩০ টাকা পেয়েছি। কতগুলো ইনভেলাপে টাকা ছিল বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো ছেঁড়া। ধারণা করছি, সেখান থেকে টাকা বের করা হয়েছে। ভেবেছিলাম জরুরি প্রয়োজনে মেটাতেও অন্তত লকারে কিছু টাকা থাকবে। কিন্তু আমরা পায়নি। সে অর্থে আমরা নিরাশ হয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা হাইকোর্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বোর্ড। আমরা কী কী করছি, কী কী করবো তার জন্য কোম্পানি আইনানুযায়ী আদালতের কাছে দায়বদ্ধ। আদালতের নির্দেশনার ছাড়া আমরা কোন কাজই করতে পারিনি।  

আদালতের নির্দেশনা হচ্ছে এই কোম্পানিটি দেউলিয়াত্বের দিকে যাবে। পাওনাদারদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি দেউলিয়াত্বের দিকে গেলে আইনানুযায়ী কোম্পানির মোট অর্থ ও দেনার মধ্যে সামঞ্জস্য করতে হয়৷ এরপর পাওয়ানাদারদের টাকা পরিশোধ করা। এখানে দুই ধরনের পাওনাদার রয়েছে। এক ধরনের পাওনাদার হচ্ছে, গ্রাহকরা, যারা বিভিন্ন পণ্য অর্ডার দিয়ে টাকা কিংবা পণ্য কোনোটিই পাননি। আরেকটি হচ্ছে এখানকার মার্চেন্ট, যারা এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত। আমাদের বোর্ডের প্রথম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত যারা গ্রাহক সেসব পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করা।

আদালত এটিও বলেছেন যদি কোনোভাবে এই কোম্পানিটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় সেই সুযোগ থাকলে সেই চেষ্টা করা। আমি সেই নীতিতে এগোচ্ছি। যদি কোনোভাবে কোম্পানিটিকে টিকিয়ে বা বাঁচিয়ে রাখা যায়। সেই নীতি থেকে এখনো আমরা বিচ্যুতি হয়নি।  আমাদের এখন প্রথম ও প্রধানত: কাজ হচ্ছে এই ইভ্যালি নামক কোম্পানিটির মোট ঠিক কী পরিমাণ অর্থ বা টাকা রয়েছে সেটি বের করা। আমাদের এই বোর্ডের মধ্যে একজন সাবেক চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট রয়েছেন তিনি খুব ভালো করেই জানেন তিনি বলেছেন যে এই অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।  

অনেক ট্রানজেকশন এবং হিউজ টাকার ট্রানজেকশন হয়েছে। তাছাড়া এই ইভ্যালির হাজার হাজার কাগজ বিভিন্ন অফিসে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেগুলো অডিট করতে সময় ও বেগ দুটোই পেতে হবে।  

অডিট কার্যক্রম উল্লেক্ষ করে তিনি বলেন, হাইকোর্ট এই অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছিলেন তারা একটি টাকাও কম নিতে রাজি নন। আমরা এটা নিয়ে নেগোসিয়েশন করার চেষ্টা করছি, তবে, ফল পায়নি। তাই গত সপ্তাহে আমরা আবারও হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি যে নতুন অডিটর প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করার জন্য যাতে করে কম পয়সায় ইভ্যালির অর্থ রয়েছে তা অডিট করা যায়। আমরা আশা করছি, কম টাকায় অডিট করা সম্ভব হবে৷ এরপর আমরা আবারও হাইকোর্টে যাবো।  

টাকা উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা গত সপ্তাহে খবর পেয়েছি দুটি ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ও সিটি ব্যাংকে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে। যেগুলো আমরা উত্তোলন করতে পারব। আদালত সেটি উত্তোলনের নির্দেশও দিয়েছে। আমরা এখনও সে টাকা উত্তোলন করিনি। আমরা এখনও নিজেদের পয়সায় চা খাচ্ছি, কাজ করছি। কোম্পানির কোনো টাকা আমরা নিচ্ছি না।  

আদালতের নির্দেশে ওই কোম্পানির দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৩০ জন লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন এর মধ্যে ১৫ জন হচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মী। সাভারের তিন গোডাউনের নিরাপত্তায় ১৫ জন আর এই অফিসে ১৫জন। এর মধ্যে চারজন অ্যাকাউন্টেন্ট। কারণ অডিট কার্যক্রমে রসদ দিতে হবে৷ 

আদালত গঠিত বোর্ড সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি রেজাউল আহসান, আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মো. শামীম আজিজ, অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, এফসিএ অ্যান্ড এফসিএমএর সাবেক চিফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ এবং বোর্ডের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।  এছাড়া উপস্থিত রয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসফিয়া সিরাত।

ইভ্যালির লকার কেটে যা পাওয়া গেল

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, জনুয়ারি ৩১, ২০২২
এমএমআই/এএটি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।