ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

মধ্যরাত থেকে ২২ দিন মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২২
মধ্যরাত থেকে ২২ দিন মেঘনায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা মেঘনায় মাছ ধরার নৌকা।

লক্ষ্মীপুর: প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা মধ্যরাত থেকে শুরু হবে। ৭ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৮ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।



জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি বাংলা মাসের ২২ আশ্বিন থেকে ১২ কার্তিক পর্যন্ত ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ফলে টানা ২২ দিন নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ। সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, কেনা-বেচা, পরিবহন, বাজারজাত ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।

আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্ব্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।  

সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা সময়ে নদীতে সার্বক্ষণিক অভিযান এবং নজরদারি রাখবে মৎস্য প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযান সফল করতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অফিদফতর, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, নৌ-বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তারা অভিযান সফল করতে দিন-রাত কাজ করবে।



বুধবার (৫ অক্টোবর) জেলার রামগতি উপজেলার মেঘনার উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখো গেছে, নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে থাকা অনেকে জেলে তাদের জাল এবং সরঞ্জাম নিয়ে মাছঘাটে চলে এসেছে। বৃহস্পতিবারের (৬ অক্টোবর) মধ্যে অন্যান্য জেলে নৌকা নদী এবং সাগর থেকে উঠে আসবে।

রামগতি বাজার সংলগ্ন মালিবাড়ি খাল মাছঘাটের বাসিন্দা ও ট্রলার মালিক নুর নবী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সাগরে মাছ ধরি। এক সপ্তাহ সাগরে মাছ ধরে বুধবার (৫ অক্টোবর) সকালে মাছঘাটে চলে এসেছি। অভিযান শুরু হয়েছে। এবারের জন্য আর সাগরে যাওয়া হবে না। তাই জাল মেরামত করে নিচ্ছি।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মাছ পেয়েছেন তিনি। তার ট্রলারে ১৯ জন মাঝিমাল্লা নিয়োজিত রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার জামান বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ সাধারণত সামুদ্রিক মাছ। তবে প্রজনন সময়ে এ মাছ নদীতে চলে আসে। আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমায় বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। এ সময়টাতে ইলিশ মাছ বাঁধাপ্রাপ্ত হলে তাদের প্রজননও বাঁধাগ্রস্ত হয়। ফলে এসব ডিমওয়ালা মা ইলিশ যাতে নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য জেলেদেরকে নদীতে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখা হয়।

সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, একটি মা ইলিশ আনুমানিক ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ ডিম দেয়। এ ডিম থেকে যে পরিমাণ ইলিশের পোনা জন্মে তা যদি ঠিকমতো বড় হওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে নদী এবং সাগর ইলিশ মাছে ভরপুর হয়ে যাবে। তাই জাতীয়ভাবে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর ২২ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।



তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা সময়ে নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া বিধান রয়েছে।  ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ আইন কার্যক্রর করা হবে। এছাড়া জেলেদের মাছ শিকারে বিরত রাখতে তালিকাভুক্তদের ২০ কেজি করে ভিজিএফ’র আওতায় চাল দেওয়া হবে।

লক্ষ্মীপুরে একটি এনজিও সংস্থার হিসাব মতে, প্রায় ৫৪ হাজার জেলে রয়েছে। তাদের প্রত্যেকে নদী এবং সাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত। এদের মধ্যে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৭৭২ জন। তাদের মধ্যে ৪০ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। যা একটি জেলে পরিবারের জন্য একেবারে অপ্রতুল্য বলে জানান জেলেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।