ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট

সুনামগঞ্জ: সারাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।  

তিনি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাত শক্ত হাতে আকড়ে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) নেতারা।

বাজুস প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি স্বর্ণ লিড দেবে বলে এ সময় তারা অভিমত প্রকাশ করেন।  

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাজুস সুনামগঞ্জ জেলা শাখা।  

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাজুসের সহ-সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এক সময় দেশ থেকে বিদেশে স্বর্ণ রফতানি করা হবে। আগামীতে দেশীয় রিফাইনারি স্বর্ণের ডিলার দেওয়া হবে। তখন স্বর্ণ কিনতে হলে বাজুস নম্বর দেখাতে হবে। তাই সমিতির বাইরে কেউ ভিন্ন পন্থায় ব্যবসা করতে পারবেন না।  

তিনি বলেন, এ দেশের স্বর্ণ শিল্পকে বাজুস প্রেসিডেন্ট শক্ত হাতে ধরেছেন। তিনি সেটি ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিকতে নিয়ে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্ত তৈরি করতে। তাই এ স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাত ধরে সোনার বাংলা গঠিত হবে।  প্রধানমন্ত্রীর সেই আহ্বানে বাজুস প্রেসিডেন্ট কেবল রাজধানীতে নয়, জেলায় জেলায় স্বর্ণ কারখানা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা নিয়েছেন। তার মতে এক সময় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের স্বর্ণ লিড দেবে। বাজুস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, জুয়েলার্স ইজ মাই ব্লাড। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পথে থেকে তুলে নিয়ে হাত ধরেছেন তিনি। তাই নীতিমালার আলোকে সংগঠন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার দ্বারা ঘোষিত সংগঠনের সদস্য হতে হবে।  

তাছাড়া স্বর্ণের চারটি ক্যারট সরকার নির্ধারিত জানিয়ে মাসুদুর রহমান বলেন, কেউ নীতিমালা বহির্ভূত স্বর্ণ বা চোরাই স্বর্ণ বিক্রি করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। সঠিক পন্থায় ব্যবসা করলে প্রশাসনের কোনো সুযোগ নেই বিরক্ত করার। বাজুস যে সুযোগ আপনাদের দিয়েছে, তাই আগে সদস্য হন।  

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে সব প্রকার স্বর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ে বাজুস আইডি নম্বর থাকতে হবে। সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে স্টিকার থাকতে হবে। এটা শুধু বাজুসের নিয়ম নয়, এটা সরকারের নিয়ম। মেম্বার না হলে সেই দায়ভার বাজুস নেবে না। আমরা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছি। তারা কিছু তথ্য চেয়েছে। সেদিন বেশি দূরে নয়, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিয়েও সরকার গর্ববোধ করবে।  

মাসুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রিফাইনারি সোর্স থেকে যখন বের হবে তখন ব্যবসার ধরনও পরিবর্তন হবে। আমাদের ওয়ার্ল্ড স্ট্যান্ডার্ড ব্যবসার দিকে যেতে হলে আমরা সেই পদ্ধতিতে অনুসরণ করতে হবে। আমাদের সংগঠন বৈধ, কখনো অবৈধ ব্যবসাকে সাপোর্ট করবে না। সবাইকে নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যবসা করতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবসা করলে প্রশাসনও আপনাদের বিরক্ত করবে না। কেননা, আমরা ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা করবো। বাজুস প্রেসিডেন্টের একটাই কথা, আমি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পাশে আছি।  তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, আমরা স্বর্ণ এক্সপোর্ট করতে চাই, ডলার দিয়ে সরকারের কোষাগার ভরে দিতে চাই। সরকারও আমাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য হবে। তাই সদস্য হয়ে বাজুসকে শক্তিশালী করুন, সায়েম সোবহান আনভীরের হাতকে শক্তিশালী করুন, আপনিও শক্তিশালী হোন।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যনির্বাহী ও ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং কমিটির সদস্য পবিত্রতা চন্দ্র ঘোষ বলেন, আমি ৩০/৩৫টি জেলা সফর করেছি। কিন্তু সুনামগঞ্জের মতো এত সুন্দর অনুষ্ঠান আর কোথাও দেখিনি।  

তিনি বলেন, বাজুসের ৫০০ সদস্য থেকে আজ ৩৬ হাজার অতিক্রম করেছে। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কেবল একটি কাগজের দরকার হবে। আর কোনো কাগজের প্রয়োজন হবে না, সেটি হলো বাজুসের মেম্বার।  

পবিত্রতা চন্দ্র ঘোষ বলেন, কিছু সংখ্যক লোক বাইরে থেকে চুরির মাল কিনে, এরা এক শতাংশও না। যে অলঙ্কার বিক্রয় করতে আসবে, তার কাছ থেকে অন্তত মেমো চাইবেন, নয়তো কোনো ডকুমেন্টস রাখবেন। স্বর্ণ কিনলে মেমোর ওপর লেখা থাকবে খরিদ মেমো। তখন কেউ কোনো ঝামেলা করলে দায় কেন্দ্রীয় কমিটি নেবে। কেননা আমি ভ্যাট-ট্যাক্স দেই, কোনো কিছু করতে হলে তখন আপনারাই হাজার হাজার লোক প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়াতে পারবেন। যে কারণে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন শক্তিশালী হবে। তখন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোনো সদস্য বিপদে পড়লে সায়েম সোবহান আনভীর রাজপথে নেমে আসবেন। তাই তার হাতকে শক্তিশালী করতে হলে আগে জেলা-উপজেলা কমিটি করতে হবে। তাহলে বাজুস শক্তিশালী হবে, সায়েম সোবহান আনভীরের হাত শক্তিশালী হবে।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্ব মুখি দেশ। বাজার অর্থনীতির দিকে ছুটছে। আজকে বিদেশি স্বর্ণ দেশে এলে জুয়েলার্স, শো-রুম তখন নাই হয়ে যাবে। ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এরইমধ্যে আমাদের পূর্ব পুরুষদের অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দেশ ছেড়েছেন। আগামীতে বাজার ধরে রাখতে পারবেন না। দেশের জুয়েলারি ব্যবসা মার খাবে। আমরা যদি অত্যাধুনিক টেকনোলজিতে দেশের স্বর্ণ কারখানা স্থাপন করতে পারি, তাহলে বাজার বিদেশ নির্ভর হবে না। সেটাই করতে চাচ্ছেন আমাদের প্রেসিডেন্ট। কত পারসেন্ট লাভে বিক্রি করবেন সেটাও নির্ধারণ করে দেবে বাজুস। মজুরি নির্ধারণ করে দেবে কেন্দ্র।  তাই সদস্য ছাড়া কেউ আগামী দিনে স্বর্ণ ব্যবসা করতে পারবেন না। সদস্যদের তখন আইডি কার্ড দেবে বাজুস। সার্টিফিকেট ছাড়াও প্রতিটি দোকানে ট্রেডমার্ক দেওয়া হবে। এর বাইরে কেউ স্বর্ণ কিনে প্রতারিত হলে বাজুস দায় নেবে না।  
   
বাংলাদেশের জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য জয়দেব সাহা বলেন, প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর আমাদের যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সে দিকনির্দেশনা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং সেটি অনুধাবন করতে হবে। আমরা চাই একতা এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট চান সবাইকে একই ছাতার নিতে আসতে হবে। তার চাওয়া সবাইকে একই ছাতার নিচে আসতে হবে।  

তিনি বলেন, সদস্য হওয়া মানে আপনি বাজুসের সদস্য হয়ে গেলেন। তাই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে ইউনিটির বিকল্প নেই। স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের নীতিমালা আছে, সেটিতে অটল থাকতে হলে একই ছাতার নিচে আসতে হবে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া আমাদের দেশের স্বর্ণের বৃহৎ মার্কেট। প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ নিচ্ছেন, তার প্রতিষ্ঠান থেকে রিফাইনারি গোল্ড হবে। তখন আমাদের বিদেশি স্বর্ণের ওপর নির্ভর করতে হবে না বরং বিদেশেও সরবরাহ করা যাবে।  
 
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং সদস্য নিহার কুমার রায় বলেন, বাজুস প্রেসিডেন্ট একটি বড় ছাতা বনিয়েছেন। সেই ছাতার নিচে সবাইকে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে এক হতে হবে। আমরা উপজেলা পর্যায়েও কমিটি করে দেব। তখন একজনের সমস্যা হলে জেলা-উপজেলা এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটিও এগিয়ে আসবে। তখন বাজুস দাম নির্ধারণ করে দেবে। বাজুস কেন্দ্রের জন্য নয়, সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কমিটি গঠন করলে মনিটরিং করা যাবে। তখন কমিটিতে গলদ থাকলে আপনারই ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ব্যবসার উন্নয়নে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।  

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাজুস সুনামগঞ্জ জেলা শাখার মন্তোষ রায়।

ব্যবসায়ী চন্দন কর্মকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও ডিস্ট্রিক্ট মনিটরিং কমিটির সদস্য পবিত্র চন্দ্র ঘোষ স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনায় ব্যবসায়ী বিমল বণিক বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়েন। তাই আমাদের একটি প্ল্যাটফর্মে থাকতে হবে। আজ এ মতবিনিময় প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের সুসংগঠিত হয়ে ব্যবসা করতে হবে। সমিতি যে দর দেবে, সে অনুপাতে বিক্রি হবে। তাতে ব্যবসার মান ঠিক থাকবে।  

ব্যবসায়ী শংকর বণিক বলেন, আমরা ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করলেও প্রশাসনের সহযোগিতা পাই না। আনভীর সোবহান সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা উজ্জীবিত। পাশাপাশি তার নেতৃত্বে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা যেমন শক্তিশালী হবে, কোনো দুষ্কৃতকারী ক্ষতি করতে পারবে না। তেমনি তার নেতৃত্বে সৎভাবে ব্যবসা করতে পারবো। ভবিষ্যতে বাজুস আরও শক্তিশালী হবে আশাবাদী তিনি।  

ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কর বলেন, প্রতিটি বাজার থেকে কমিটি করে মনিটরিং করতে হবে। তাহলে সব স্থানে স্বর্ণের দর একই থাকবে। যাতে আমরা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারি। আর কেউ একক ব্যবসা করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আপনারা বিহিত ব্যবস্থা নেবেন।  

ব্যবসায়ী কাজর দে বলেন, প্রতিটি জেলায় স্বর্ণ আসল-নকল যাচাই করার মেশিন দিলে ভালো হয়।  

মধ্যনগর স্বর্ণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন বণিক বলেন, আমাকে চিনতে হলে যেমন নাম থাকতে হবে। তেমনি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের পরিচয় কমিটিতে।  

সভায় আরও বক্তব্য দেন সাচনা উপজেলার মানিক বণিক, বিমল বণিক, ছাতক জুয়েলারি সমিতির সেক্রেটারি সজিব পাল।

এ সময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বর্ণ ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র বণিক, নিখিল চন্দ্র বণিক, বজলাল বণিক, বিকাশ বণিক, নির্মল বণিক, শংকর বণিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির জেলার সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক, ব্যবসায়ী সজল দেব, প্রদীপ বণিক, কৃষ্ণ বণিক, জাউয়াবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া, জগন্নাথপুরের ব্যবসায়ী মানিক বণিক, দিরাই উপজেলার দিলীপ বণিক, মধ্যনগর উপজেলার লিটন বণিক, জাউয়া থেকে বাবুল বণিক, বিশ্বম্ভপুর উপজেলার হাকিম মিয়া, ছাতক উপজেলার ব্যবসায়ী নিরঞ্জন পাল ও দিরাইয়ের পঙ্কজ দে বণিক।
 
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাউয়াবাজারের ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া। গীতা পাঠ করেন বাবু দুলাল দে। সাংস্কৃতিক পর্বে উপস্থাপনা করেন শিক্ষিকা ক্রিসেন্তিমা অন্তরা। অনুষ্ঠানে বাউল ও লোকসংগীত গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।