ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

অবসর ভাতা

বেসরকারি শিক্ষকদের ভোগান্তির অবসান চাই

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
বেসরকারি শিক্ষকদের ভোগান্তির অবসান চাই ছবি: প্রতীকী

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর ---আজকাল এই আপ্তবাক্যটি যেন অন্ত:সারশূন্য গালভরা বুলিতে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে দেশে শিক্ষকদের সার্বিক অবস্থা করুণ।

বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের। বেতন, ভাতা, বোনাস সবক্ষেত্রেই তারা তুলনামূলক বৈষম্য ও অবহেলার শিকার। চাকরিকালে যেমন, তেম্নি অবসর গ্রহণের পরও। অবসর গ্রহণের পর অবসর ভাতাও তারা পান না সময়মতো। অবসর ভাতা এমনই এক অধরা সোনার হরিণ। অনেকের ভাগ্যে জীবদ্দশায় এ-ভাতা জোটেই না। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখিও কম হয়নি। তবু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটা কোনো সরকারই করছে না।

এর ফলে শিক্ষাদানে জীবনের প্রায় পুরোটা সময় পার করা শিক্ষকদের বেশিরভাগেরই এখন দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। অবসর ভাতা পেতে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হচ্ছে। জীবদ্দশায় অনেকের কপালে জোটে না অবসর ভাতা। কেউ কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে একরকম বিনা চিকিত্সায় মারা গেছেন। অনেকে রোগে শয্যাশায়ী রয়েছেন, আবেদন করে খোঁজও নিতে পারছেন না। অনেকে বছরের পর বছর ঘুরে টাকা পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছেন। টাকা না পেয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের স্ত্রী-সন্তানরা টাকার জন্য কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘরছেন। এমন নজির শত শত।

জানা যায়, এ-মুহূর্তে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে ২৫ হাজার এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের টাকা পেতে ৪৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে।

শিক্ষকদের এই করুণ দশার জন্য প্রথমত দায়ী এখাতে বরাদ্দের স্বল্পতা। প্রায় ৫ লাখ শিক্ষকের মূল বেতনের ৪ শতাংশ হারে প্রতিমাসে অবসর সুবিধা খাতের জন্য জমা হয় প্রায় ১৭ কোটি টাকা। অথচ প্রয়োজন ৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি মাসে ৩৯ কোটি এবং বছরে ৪৬৮ কোটি টাকা। একইভাবে ৫ লাখ শিক্ষকের মূল বেতনের ২ শতাংশ হারে প্রতিমাসে কল্যাণ খাতের জন্য জমা হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। অথচ প্রয়োজন ১৮ কোটি টাকা। ঘাটতি সাড়ে ৯ কোটি এবং বছরে ১১৪ কোটি টাকা। জমা পড়া সব আবেদন  নিষ্পত্তি করতে অবসর সুবিধা বোর্ডের প্রয়োজন ১৫শ’ কোটি টাকা। আর কল্যাণ ট্রাস্টের সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৫শ’ কোটি টাকার বেশি প্রয়োজন।

দেশে কতো অপ্রয়োজনীয় খাতেও সরকারি অর্থের অপচয় হয়ে থাকে। অনেক প্রকল্পের টাকা ফেরতও যায়।   অথচ জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের অবসর ভাতার পর্যাপ্ত বরাদ্দটুকু মেলে না। অবসর বোর্ডের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কথা নাহয় না-ইবা বললাম! এসবকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার যুক্তি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই।
 
কর্মক্ষমতা হারিয়ে জীবন সায়াহ্নে উপনীত শিক্ষকদের অবসর ভাতার জন্য দুয়ারে দুয়ারে কেন ধর্না দিতে হবে? কেন উৎকোচও দিতে হবে? কেন হয়রানির শিকার হতে হবে? এমনিতেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পদোন্নতির কোনো সুব্যবস্থা নেই। তারপরও যদি অবসর ভাতার মতো সামান্য আর্থিক সুবিধাটুকু তারা না পান তাহলে তারা কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন? 

জনবান্ধব ও শিক্ষাবান্ধব বলে সরকার নিজেকে দাবি করে থাকে। বাস্তবে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অবসরে যাওয়া জীবন সায়াহ্নে উপনীত শিক্ষকদের দুর্ভোগ জিইয়ে না রেখে সরকারের উচিত হবে দুর্ভোগের আশু অবসান ঘটানো। এজন্য অবসর ভাতা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে। তা করতে সরকারের আহামরি তেমন ব্যয়ও হবে না। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে প্রয়োজন হবে সাকুল্যে কয়েকশ কোটি টাকা। অংকটা খুবই নগণ্য। সরকার একটু আন্তরিক হলেই হাজার হাজার শিক্ষকের মুখে হাসি ফুটবে। আমরা আমাদের জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের মুখে নির্ভাবনার অমল হাসি দেখতে চাই।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।