ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সম্পাদকীয়

বিশেষ সম্পাদকীয়

মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অবসান হোক

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৫
মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অবসান হোক ছবি: প্রতীকী

দেশের সংবিধান ও আইনের চোখে দেশের সব নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকার সমান। বাস্তবে তা সবক্ষেত্রে হয় না।

নারীর বেলায় আইনের ব্যত্যয় সবচেয়ে প্রকট। আবার সব ক্ষেত্রে সব নারী সমান সুবিধা ও অধিকার ভোগ করতে পারেন না। এখানেও রয়েছে নারীতে-নারীতে খাতওয়ারি বৈষম্য। নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়সীমা সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে দু’রকম।

সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপনবলে সরকারি খাতে কর্মজীবী মায়েরা এখন মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন ছয় মাস। অথচ গার্মেন্টখাতসহ বিভিন্ন বেসরকারি খাতে কর্মজীবী মায়েদের বেলায় তা দু’মাস কম---চার মাস (অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বদৌলতে বেসরকারি শিক্ষকদেরও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করা হয়েছে। )। সেটা পাওয়া না পাওয়াও আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ইচ্ছানির্ভর।

একই দেশে একই যাত্রায় দু’রকম বিধান সংবিধানের মূল স্পিরিটের পরিপন্থি। অথচ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহল এসব দেখেশুনেও  উদাসীন, নির্বিকার।  

মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত মায়েদের মধ্যে দৃষ্টিকটু এই বৈষম্য সংবিধান, আইন ও মানবাধিকারের দু’রকম সংজ্ঞা দিচ্ছে।

এ-যেন নারীতে-নারীতে নতুন এক বর্ণাশ্রম! বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মায়েদের পাশাপাশি তাদের শিশুরাও এই অন্যায় বৈষম্যের শিকার। শিশুদের প্রতি রাষ্ট্র ও সমাজের এই আচরণ দ্বিমুখি।

মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রসূতি নারী ও তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই এ সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের ৬ মাস সবেতন ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তা দু’মাস কম কেন? বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মা ও তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ব্যাপারটি কি রাষ্ট্রের চোখে কম গুরুত্বপূর্ণ?

এখানেও কথা আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরতরা প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পূর্ণ মাত্রায় ভোগ করতে পারলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা ব্যত্যয় ঘটে। বিশেষ করে নারীশ্রমঘন গার্মেন্ট খাতে। যেটুকু অধিকার কাগজে কলমে আছে তারও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয় না।

মানবাধিকারের নামে সর্বক্ষণ গলা ফাটানো অনেক এনজিও পর্যন্ত এর বাইরে নয়। এদের অনেকেই মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে  টালবাহানা করে থাকে। অনেক সময় বেতন কেটে রাখে বা অর্ধেক বেতন দেয়।

‘সরকারি কর্মজীবী মায়েদের জন্য সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে ছয় মাস ছুটি নিশ্চিত করল। আমরা কী দোষ করলাম?’---একটি পত্রিকাকে দেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী এনজিওকর্মীর এই প্রশ্নের মধ্যেই শুভঙ্করের ফাঁকিটা বোঝা যায়।

গার্মেন্টসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন সবেতন ছুটি দিতে হবে বলে ছাঁটাইয়ের আশ্রয়ও নেয়।

কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মায়েদের চার মাস ছুটি পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা পাওয়া যায় না।

যেহেতু সরকারি বা বেসরকারি মা বলে আলাদা কিছু নেই, সেহেতু সবার জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ সমান করা জরুরি। সরকারের উচিত বৈষম্য ও অবিচারকে জিইয়ে না রেখে সবার প্রতি সমান আচরণ করা। মা ও শিশুদের মধ্যে অধিকার বন্টনে বৈষম্য চালু রাখা হলে তা এক সময় ব্যাধি হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে আচ্ছন্ন করবে।

সরকারকে এই বৈষম্য অবসানে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কারা কারা মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় এবং দেয় না সে পরিসংখ্যানও তৈরি করতে হবে। ছুটি দিলেও কতোটা দেয় বা সবেতন ছুটি দেয় নাকি বেতন কেটে রাখে সেসবের হিসাব রাখা জরুরি।

‘...সরকারি কর্মজীবী মায়েরা ছয় মাস পেলেও আমরা শ্রম আইন মেনে শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। ’-- বিজিএমইএর প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যেই বৈষম্যের ব্যাপারটি স্পষ্ট। আমরা চাই, বৈষম্য ও বঞ্চনার আশু অবসান ঘটুক। পদক্ষেপটা সরকারকেই নিতে হবে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পথে তা হতে পারে এক লম্বা কদম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।