রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী): চলতি শিক্ষাবর্ষে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী পায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। ভারতের একজন শিক্ষার্থী আবেদন করলেও পরে তিনি ভর্তি হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
এজন্য শ্রেণিকক্ষে বাংলায় পাঠদান, কোর্স না করানো, আন্তর্জাতিক মানের পাঠ্যক্রমের অনুপস্থিতি, বই-নোটসহ বেশিরভাগ শিক্ষা উপকরণ বাংলায় থাকার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমির শাখা সূত্রে জানা যায়, সর্বপ্রথম ২০১৪-১৫ সেশনে দুই জন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর আগমন শুরু হয়। এর আগে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন এমন তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ সেশনে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিনজনে। এরপর ২০১৭ সালে জর্দান, সোমালিয়া ও নেপাল থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন।
২০১৮ সালে নেপাল ও জর্দান থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে সময়ের ব্যবধানে মাত্র একজন ছাড়া টিকতে পারেননি কেউ। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি একসঙ্গে পাঁচজন নেপালি শিক্ষার্থী গোপনে দেশ ছাড়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়ে বছর না পেরোতেই চলে যান জর্দানের শিক্ষার্থী রাদ ইব্রাহিম খলিল আবুশায়ুন।
এরপর ২০১৯-২০ সেশনে ৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও ২০২০-২১ সেশনে ভর্তির ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়ে। সে বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ বিভাগের মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে অন্তরা হালদার নামে মাত্র একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর আর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।
বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই তার সর্বজনীনতা ধরে রাখতে পারে না বলে উল্লেখ করেছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা আন্তর্জাতিক। এমনকি আমেরিকান অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সে দেশের শিক্ষার্থীদের চেয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীর দরকার অনেক বেশি। যদি একটি দেশের বা এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তার সার্বজনীন চেহারা ধারণ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যায় তারা মোটামুটি সবাই ক্লাসের ভালো ছাত্র। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থী দরকার, কিন্তু ভর্তির সময় কোন মানের শিক্ষার্থী নিচ্ছি সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে।
জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি এ জায়গাটা ঠিক করার জন্য। কিছুদিন আগে আমাদের যে ব্রুশিয়ারগুলো বানানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অনেক ভুল থেকে গেছে। এগুলো যদি আমরা সুন্দরভাবে করতে পারি তাহলে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পাঠাব। তখন তারাও আমাদের সাহায্য করতে পারবে। আমরা যে অভাব বোধ করছি সেটা পূরণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
এমএমজেড