ঢাকা: চলমান আন্দোলনের মধ্যেই দাবি না মানলে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রতিষ্ঠানটির শহীদ মিনারের পাদদেশে বেলা ১১ টায় সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের আয়োজনে কলেজের গভর্নিং বডির ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজিত হয়।
তিনি বলেন, কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রায় ১৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। গভর্নিং বডির কতিপয় অসাধু সদস্যদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় তার দ্বারা ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। সুপ্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির সভাপতির প্রত্যক্ষ মদদে অনিয়মের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ ও জালিয়াতির মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাট ও আত্মসাৎ করার অভিযোগে অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহমেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী, বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী কিছুদিন আগে সাময়িক বরখাস্থ হন। তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য বিধি মোতাবেক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের পরামর্শ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় প্রায় পাঁচ মাস ধরে আইনগত জটিলতার মধ্যে আটকে আছে।
সাময়িক বরখাস্থকৃতদের পুনর্বহাল ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যা কলেজের সাধারণ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেনে নেননি। গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের যোগসাজশে সাময়িক বরখাস্থকৃতদের এ ধরণের বিভিন্ন এজেন্ডা গভর্নিং বডির সভায় নিয়মিত বাস্তবায়িত হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, উপাধ্যক্ষ নিজেও বিভিন্ন কমিটির আহ্বায়ক থেকে দুর্নীতি করেছেন। ২০২২ সালে ভর্তি কমিটিতে ১৬ লাখ টাকা তোলা হয়। এ থেকে ৮ লাখ টাকার কোনো হিসাবই পাওয়া যায়নি। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কমিটিতে এভাবে নগদ টাকা উত্তোলন করে খরচের সঠিক হিসাব ছাড়াই গভর্নিং বডির অর্থ কমিটিতে ও নিয়মিত সভায় বিনা বাধায় অনুমোদন করা হয়েছে। এ ধরণের দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষভাবে গভর্নিং বডির সদস্যরা জড়িত।
গভর্নিং বডির সভাপতি ও কতিপয় সদস্যদের সহযোগিতায় অনিয়ম করে অপ্রয়োজনীয় বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালানো হয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে কিছু দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের সহায়তায় বিনা রশিদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সার্ভিসের টাকা নেওয়া হয়। আবার কখনও ভুয়া কাগজপত্র, ভাউচার তৈরি করে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। বিভিন্ন ক্রয়, সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ দরপত্রবিহীন, বিল-ভাউচারবিহীন বা জাল দরপত্র ও জাল বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে তুলে করা হয়। এ ধরণের দুর্নীতিতেও প্রত্যক্ষভাবে গভর্নিং বডির সদস্যরা জড়িত থাকেন।
শিক্ষক-কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের দ্বারা তাদের অপমানিত ও হেনস্থা হতে হয়। শিক্ষক কর্মচারীদেরকে ভয়ভীতির মধ্যে রাখতে শিক্ষকদের অবৈধভাবে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
লিখিত বক্তব্যের শেষে, আইডিয়াল কলেজের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা করা হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানসহ দুর্নীতিগ্রস্থ সব সদস্যদের দ্রুত পদত্যাগ দাবী করেন। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বর্তমান গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে অ্যাডহক কমিটি তৈরি করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতেও দাবী জানান। এ সময় দাবী না আদায় হওয়া পর্যন্ত কলেজের সকল প্রকার কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এমকে/এমজে