ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

কোমলমতিদের আশঙ্কা: বৃত্তির ফল পাল্টে যাবে না তো?

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
কোমলমতিদের আশঙ্কা: বৃত্তির ফল পাল্টে যাবে না তো?

ঢাকা: প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল ঘোষণা, আবার সেটি স্থগিত করায় দেশ জুড়ে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের মনে আশঙ্কা বাড়ছে। পাছে পাল্টে না যায় বৃত্তির ফল।

এ আশঙ্কা থেকে তাদের মনে জড়ো হচ্ছে নানা প্রশ্ন। কেন, কীভাবে, কী কারণে ফলাফল ঘোষণার পর আবার স্থগিত করা হলো। নম্বর পাল্টে গিয়ে তাদের রেজাল্ট আবার খারাপ হবে না তো?

রাজধানীর মিরপুরের একটি স্কুল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় মো. আরেফিন সিদ্দিক কাব্য। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর জানা যায় কাব্য ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। রেজাল্ট জেনে সে যত না খুশি হয়, তার চেয়ে দ্বিগুণ আনন্দ দেখা দেয় তার বাবা-মার মনে। কিন্তু সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যখন জানানো হলো পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। নতুন ফল আগামীকাল বুধবার (১ মার্চ) আবার দেওয়া হবে, ম্লান হয়ে যায় কাব্য খুশি।

অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রাথমিক বৃত্তি ফলাফল পুনঃযাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় অদ্য প্রকাশিত প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল স্থগিত করা হলো। আগামীকাল ১ মার্চ অপরাহ্ণে পুনরায় প্রাথমিক বৃত্তির ফলাফল প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও ফল প্রকাশ করা হবে।

রাতে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়  কাব্যর বাবা খোকনের। তিনি বলেন, আমি বাসায় ফিরে ছেলের কাছে জানতে পারলাম কাল আবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে। কাব্য ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ায় বেশ খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ছেলে বার বার আমাদের কাছে আসছে, তার মুখে একটাই প্রশ্ন- বাবা রেজাল্ট পাল্টে যাবে না তো? ওর মুখ দেখে আমার ও আমার স্ত্রীর মনও ভেঙে গেছে।

ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে এমন করার কী দরকার- প্রশ্ন করেছে এবারের বৃত্তি পরীক্ষার্থী শাফকাত। সে বলেছে, আমি, আমার বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছি। আমি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। কিন্তু এখন নাকি আবার রেজাল্ট দেবে। আমি যদি ভালো রেজাল্ট না করি?

রংপুরের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক ও একটি হাইস্কুলের শিক্ষক জানান, তার মেয়ে ট্যালেন্টপুলে না পেলেও সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু ফলাফল আসেনি। আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তার প্রত্যাশিত নয়। ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর কাছে এ পরীক্ষা অনেকটা স্বপ্নের। সেখানে এমন তামাশার কোনো মানে নেই। কাল কী হয়, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

পরীক্ষার্থীদের এ ফল নিয়ে উৎকণ্ঠায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু। তিনি বলেন, এটা একটা তামাশা। বাচ্চাদের বৃত্তির টাকা লুটে খাওয়ার জন্য ফল নিয়ে তামাশা শুরু হয়েছে। নতুন করে ফল ঘোষণা হলে যারা বাদ পড়বে তাদের মন ভেঙে যাবে। তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি হবে। বৃত্তির ফল নিয়ে এমন তামাশা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবিও করেন তিনি।

পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের এমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে যার যার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে বাংলানিউজ। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, তারা সবাই একে অপরকে গণমাধ্যমের ফোন এড়িয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তাও এ তথ্য দিয়েছেন।

আজ দুপুর ১টায় সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। ফলাফল অনুসারে ২০২২ সালের এ পরীক্ষায় ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পায়। এর মধ‍্যে ট‍্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি পায় ৪৯ হাজার ৩৮৩ শিক্ষার্থী।

কিন্তু, ফল প্রকাশের চার ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটার দিকে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে সে ফল সরে যায়। সে সময় বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কেউ কিছু জানাতে পারেনি। এ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেলে রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিতকৃত ফল বুধবার প্রকাশ করা হবে।

পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান,  কোডিং সংক্রান্ত মারাত্মক ভুলের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে ফল দিতে গিয়ে কিছু পরিবর্তনও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমআইএইচ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।