ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নাসা গমন: অলীক জানায়নি, তাই সাহায্য করেনি শাবিপ্রবি

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
নাসা গমন: অলীক জানায়নি, তাই সাহায্য করেনি শাবিপ্রবি

শাবিপ্রবি, (সিলেট): গত কয়েকদিন ধরে ‘স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ’-১৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল ‘অলীক’র মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) গমন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছাত্রদের এত বড় অর্জনের পরও কেন প্রশাসন তাদের সহায়তা করেনি, তাদের অর্থসংকট জেনেও কেন এগিয়ে আসেনি, সে বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছিল।

নাসায় যাওয়া নিয়েও অনিশ্চিতয়তা তৈরি হয়েছিল দলটির।

এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা কিংবা সহযোগিতা নিয়ে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহল থেকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা না পাওয়ায় স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা করে নাসা গমনে বিমানের টিকিট কাটেন অলীকের চার সদস্য- আবু সাবিক মেহেদী, এস এম রাফি আদনান, কাজী মাইনুল ইসলাম ও সাব্বির হাসান। রোববার (১২ মার্চ) দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে চড়েন তারা।

এসব বিষয়ে জানতে বাংলানিউজ কথা বলে শাবিপ্রবি প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। অলীক যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে কথা হয় দলের সদস্য আবু সাবিক মেহেদী রাফি আদনানের সঙ্গে। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিষ্কার হওয়া যায়- অলীক শাবিপ্রবিকে জানায়নি বলেই তারা প্রশাসনের সহায়তা পায়নি।

অলীক দলনেতা আবু সাবিক মেহেদী বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’এ বেস্ট ডেটা ইউটিলাইজেশন ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় অলীক। ২০১৯ সালে নাসার সাত দিনব্যাপী কর্মশালায় আমন্ত্রণ পেলেও ভিসা জটিলতার কারণে আমাদের যাওয়া হয়নি। এবার স্পন্সর বা সহযোগিতা না পাওয়ায় আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিমানের টিকিট কাটি।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করার বিষয়টিও উঠে আসে। পরে শাবিপ্রবি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাফি আদনান বলেন, সহযোগিতার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলাদাভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। তাই প্রশাসন থেকেও আমরা সাড়া পাইনি।

প্রশাসন আপনাদের বিষয়টি জানতো কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে রাফি বলেন, আমরা আলাদা করে জানাইনি। তবে জানতো না, তা নয়। অভিভাবক কেন জানবে না? তাদের কেন জানাতে হবে?

অলীকের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের রেসপন্স পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদও। তিনি বলেন, তারা তারা আমাদের জানায়নি, যোগাযোগও করেনি। আমাদের না জানালে কীভাবে সহযোগিতা করবো? এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু করতে পারে না। এখানে নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হয়।

এ সময় ২০১৯ সালে অলীক টিমকে সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ২০১৯ অলীকের সদস্যরা নাসায় আমন্ত্রণ পেয়েছিল। আমাদের সঙ্গে তখন যোগাযোগ করেছি দলটি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ লাখ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে ৫ লাখ; মোট ৮ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। যে সময় তারা যেতে না পারায় সে অর্থ ফেরত দিতে হয়েছে। এবারও যোগাযোগ করলে কোনো না কোনো ব্যবস্থা করাই যেত।

উপাচার্যের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাফি আদনান বলেছিলেন, ২০১৯ সালে প্রশাসন থেকে যে সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে, সেটা আমরা অফিসিয়ালি পায়নি। সেটা ভেতরে ভেতরে হয়েছে, আমাদের পর্যন্ত আসেনি। তারা কত টাকা ব্যবস্থা করেছিল তাও আমরা জানতাম না।

এবারের অর্থ সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের লোকাল অর্গানাইজার আমাদের ফান্ড কালেকশন করার কথা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে তারা অর্থ সহায়তা করতে না পারায় আমরা অনিশ্চয়তায় পড়েছিলাম। সময় কম থাকায় কারও সাথে ওভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালি কমিউনিটি আমাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে। কয়েকটা সংগঠনও আমাদের যোগাযোগের করেছে।

প্রশাসন সহযোগিতা করতে চাইলে অলীক সাড়া দেবে কিনা, জানতে চাইলে রাফি বাংলানিউজকে বলেন, প্রশাসনকে আমরা আগে জানাইনি, তবে আমাদের অবস্থা সম্পর্কে তারা নিশ্চয়ই জানেন।   আমরা যে টাকা ঋণ করেছি সেটা পরিশোধ করতে হবে। তারা যদি সহযোগিতা করতে চা, আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাবো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানা সমালোচনা হচ্ছে জানিয়ে প্রশ্ন করলে রাফি আদনান বলেন, আমরা অনেক ব্যস্ততার ছিলাম, কে কি বলেছে সেটা আমরা দেখার সুযোগ পাইনি। হয়ত এখানে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। সেটা নিয়ে আপাতত মনোযোগ দিচ্ছি না। আমরা প্রোগ্রামটা ভালোভাবে শেষ করে দেশে ফিরি তারপর দেখা যাবে। আপাতত সবার দোয়া চাই।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা চাই তারা ভালোভাবে তাদের প্রোগ্রাম শেষ করুক। বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করুক। তাদের জন্য শুভ কামনা। দেশে ফিরে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কি করা যায়, তা আমরা অবশ্যই ভেবে দেখবো।

আগামী ১৫ ও ১৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে নিজ সদর দপ্তরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন টিমগুলোকে সম্মাননা দেবে নাসা। সে লক্ষ্যে অলীক দল এখন যুক্তরাষ্ট্রের পথে। আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থান করবেন না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় টিম অলীক। প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৭৯টি দেশের ১৩৯৫টি দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চ্যাম্পিয়ন হয় অলীক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।