ঢাকা: বাংলাদেশের শতকরা ৯১ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান। বাকি ৯ ভাগ মানুষও ধর্মপ্রাণ।
শনিবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বোর্ড পরীক্ষায় ধর্মশিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র পাঠ্যক্রম প্রণয়ন শিক্ষার সর্বস্তরের ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলককরণ ও শিক্ষা বৈষম্য দূরিকরণের দাবিতে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো হানিফ খান বলেন, ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকে মুসলমানদের জন্য ইসলামি শিক্ষাই ছিল একক শিক্ষা। এতেই রয়েছে জ্ঞান, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহারিক জ্ঞান যার উৎস কুরআন, সুন্নাহ এবং যে উৎসকে গবেষণা করে যুগ চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা। ইবনে সিনা, জাবের বিন হাইয়্যান, ইবনে রুশদ, ইবনে খালদুন, গাজ্জালী, সমরকাদিসহ হাজার হাজার বিশ্ববিখ্যাত জ্ঞানী বিজ্ঞানী তৈরি হয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে ভূমিকা রেখেছেন। ব্রিটিশরা এসে মুসলমানদের ইমান-আকিদাসহ সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে সেকুলার ধর্ম বিবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। যার ফলে মুসলমানের সন্তানরা ইসলামি আদর্শ থেকে অনেক দূরে সরে যায়।
তিনি বলেন, ২০১২ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষায় ইসলাম শিক্ষা যতটুকু ছিল নতুন শিক্ষানীতির দোহাই দিয়ে অনেকটা সংকোচিত করে এইচএসসি পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষা নামমাত্র রাখা হয়। ২০২১ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমে পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবইয়ে ইসলাম ও মুসলমানের ইমান আকিদা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, আখলাক-চরিত্র অবদানকে সম্পূর্ণ ম্লান করে ইসলাম শিক্ষাকে নামমাত্র এসএসসি পর্যায় পর্যন্ত রাখা হয়, তাও বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে গুরুত্বহীন করা হয়। এইচএসসি স্তরে ইসলাম তথা ধর্মশিক্ষা শিক্ষাক্রমে নাই বললেই চলে।
১০ দফা দাবি হচ্ছে-
(১) বর্তমান শিক্ষাক্রমকে বিশেষজ্ঞ আলেম-ওলামা সমন্বয়ে সংশোধন করা।
(২) শিক্ষার সর্বস্তর ও সব শাখায় (প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ার ও আইসিটিসহ সব), সব ধরনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে ইসলাম তথা ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
(৩) ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে ইসলাম শিক্ষা তথা ধর্মশিক্ষাকে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করা।
(৪) মাদ্রাসা শিক্ষার স্বকীয়তা রক্ষা ও যোগ্য আলেম তৈরীর লক্ষ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
(৫) সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষায় বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা।
(৬) মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে অবাধে প্রবেশের লক্ষে আরবি ভাষা কোর্স চালু করা।
(৭) স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা মঞ্জুরীর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা এবং মঞ্জুরী প্রাপ্ত ইবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা।
(৮) মাদ্রাসা ও কলেজের অনার্স কোর্সের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা ও এমপিওভুক্ত করা।
(৯) এমপিওভুক্ত মহিলা মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ মহিলা শিক্ষিকা নিয়োগের ব্যবস্থা করা ও পুরুষ মাদ্রাসায় মহিলা কোটা নিয়োগের শর্ত শিথিল করা।
(১০) ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহে ( মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা অধিদপ্তর, বি এম টি টি আই, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সহ) ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ইসলামি শিক্ষা উন্নয়ন বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. এ কে এম মাহবুবুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি ফাউন্ডেশনের গভর্নর ড. মুফতি মুহাম্মদ কাফীলুদ্দীন সরকার সালেহী।
এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল চরমোনাই কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, ঢাকা দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আ.খ.ম. আবুবকর সিদ্দীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. রুহুল আমিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো শহীদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আ.ক.ম. আব্দুল কাদের প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
ইএসএস/এমএমজেড