ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির ৬ জন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
লিফট কিনতে তুরস্কে যাচ্ছেন পাবিপ্রবির ৬ জন

পাবনা: কৃচ্ছ্রসাধনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তুরস্ক যাচ্ছেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল।  

তাদের এ সফরের হেতু লিফট কেনা বলে জানা গেছে।

এনিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

চিঠিতে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনার লিফট সংগ্রহের প্রাক-জাহাজীকরণে (প্রি-শিপমেন্ট) ছয় সদস্যের একটি পরিদর্শক দলের তুরস্ক ভ্রমণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ০৯ মে তুরস্ক সফরের কথা থাকলেও পরে সূচি পিছিয়ে পুনরায় আগামী ৬ জুন সফরের দিন ঠিক হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাডেমিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলসহ মোট পাঁচটি আধুনিক ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর জন্য কেনা হবে প্রায় ২৫টি লিফট। আর সেই লিফট কেনাকাটা ও তদারকির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল যাচ্ছে তুরস্ক সফরে।

এ দলের দলনেতা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা কামাল খানকে। উপ-দলনেতা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনকে। এছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ আহমেদ, উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী (ইইই) মো. রিপন আলী ও উপ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশলী জহির মোহা. জিয়াউল আবেদীন। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান।  

জনগণের অর্থ অপচয় করে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবিলম্বে এ সফর বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু বলেন, বর্তমান সময়ে গুগলে সার্চ দিলেই সব ধরনের লিফটের ডিজাইন পাওয়া যায়। সারাদেশে বিশাল বিশাল বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০তলা ভবনের লিফটের জন্যও তুরস্ক, জার্মানি, চায়না বা রাশিয়ায় প্রতিনিধিদল পাঠাতে হয়নি। তাহলে পাবিপ্রবির সামান্য কয়েকটি লিফট কেনার জন্য কেন অর্থ অপচয় করে বিলাসবহুল সফর করতে হবে?

তিনি আরও বলেন, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিশাল বিশাল ভবনের জন্যও লিফট কিনতে বিদেশে যেতে হয়নি। ঠিকাদার কেন ২০ লাখ টাকা খরচ করে শিক্ষকদের লিফট কেনার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন? তাহলে নিশ্চয় এর বিনিময়ে যত খারাপ লিফট, নিম্নমানের লিফট, রয়েছে সেগুলো কিনে আনা হবে। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান নিয়ে চিন্তা না করে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন। এজন্যই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে প্রথম হলেও সেই শিক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের জন্য সব অরাজকতা শুরু হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক পাবনার সভাপতি আব্দুল মতিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের লিফট কেনার জন্য শিক্ষকদের বিদেশ ভ্রমণ মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এটা স্পষ্ট সরকারি অর্থের অপচয়। ঠিকাদারের খরচে গেলেও এটা অপচয় বলব। ঠিকাদারকে তো লিফট বুঝিয়ে দিতেই হবে। তাহলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানো বাদ দিয়ে শিক্ষকদের লিফটের কারখানা দেখতে যেতে হবে কেন? 

পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম পাকন বলেন, মাত্র কয়েকটি লিফট কেনার জন্য বিদেশে ছয়জন কর্মকর্তাকে যেতে হবে- এমন অপচয় আমি সমর্থন করি না। সামান্য কয়েকটি লিফট দেশে থেকেই কেনা যায়। এ ছয় কর্মকর্তার ১২ দিন থাকা খাওয়া ব্যয়বহুল হবে। এসব অযথা ব্যয় না করে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে টাকা খরচ করা উচিত।

তবে নিয়মের মধ্যে থেকেই এ সফরের আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জি এম আজিজুর রহমান বলেন, ছয়জনের যে প্রতিনিধি দল তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন, সেজন্য সরকারি কোনো অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে না। সফরের এ অর্থ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, সফরের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই অনুমোদন করা আছে। এ সফর আরও আগে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কৃচ্ছ্রসাধনে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, আমরা সে নির্দেশনাকে সম্মান করেই এতো দেরি করেছি।

অভিযোগ রয়েছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রকল্পের পরিচালক গোপনে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি কাউকে সম্মান করেন না। নিজের খেয়ালখুশি মতো চলেন তিনি। প্রকল্পের অগ্রগতিসহ কতটুকু কাজ, কী কী উন্নয়ন হচ্ছে, সেটির কোনো তথ্য তিনি দিতে চান না। একই সঙ্গে এ নির্মাণ কাজ করার সময় প্রাণহানিসহ নানা দুর্ঘটনাও ঘটেছে। আহত হয়েছেন অনেকেই। তবে সব কিছু গোপন করা হয়েছে। তবে বর্তমান উপাচার্য যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। তবে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের শুনানি চলছে।  

পাবনাবাসীর দাবি, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়কে অপচয় ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।