ব্রাহ্মণবাড়িয়া: অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে দারিদ্র্য যে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার প্রমাণ দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার।
মায়ের সঙ্গে কাপড় ও কাঁথা সেলাই করে অভাব অনটনের সংসারে সহযোগিতা করেছে সুমাইয়া।
এমন ব্যস্ততার ফাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভোলাচং হাইস্কুল থেকে মানবিক শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সুমাইয়া। তার এই সাফল্যে গর্বিত স্কুলের শিক্ষকরাসহ এলাকাবাসী।
তবে আর্থিক অনটনের কারণে সুমাইয়ার উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর শহরের সুহাতা এলাকার জীবন মিয়া ও পারভিন আক্তারের বড় মেয়ে সুমাইয়া আক্তার।
পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানায়, অভাবের সংসারে অটোরিকশাচালক বাবার আয় যথেষ্ট না হওয়ায় মা কাঁথা সেলাই করে সংসারের ঘানি টানেন। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেনি সুমাইয়া। মায়ের পাশে দাঁড়াতে সে নিজেও শুরু করে দর্জি ও কাঁথা সেলাইয়ের কাজ। এরই ফাঁকে টিউশনিও করেছে সে। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করেছে সুমাইয়া। দিনভর কঠোর পরিশ্রম শেষে ছোট্ট আঁটসাট ঘরে পড়ার জায়গা হতো না। তাই চাচা স্বপন মিয়ার গুঞ্জন পাঠাগারে বসে চালিয়ে যেত পড়ালেখা। তার এ অদম্য ইচ্ছার কারণে শিক্ষকরাও তাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ান। পাশাপাশি এলাকাবাসী তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। আর তার সফলতা স্বরূপ সুমাইয়া অর্জন করে জিপিএ-৫।
এলাকাবাসী জানায়, দারিদ্র যে কেবল অজুহাত, তা আবারও প্রমাণ করে দিল সুমাইয়া। সেই ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা অনেক কষ্ট করে জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছে। লেখাপড়ার প্রতি তার অন্যরকম একটা আগ্রহ রয়েছে। গ্রামের সিনিয়র শিক্ষার্থীরাও তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। তার এ সফলতা সকলের জন্য অনুপ্রেরণা। তার এগিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী সব সময়ই পাশে থাকবে।
সুমাইয়ার বাবা ও মা বলেন, সুমাইয়া লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি, দর্জির কাজ এবং কাঁথা সেলাই করে সংসারের খরচ চালাতে অবদান রাখছে। সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাতে আমরা খুশি। মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে দারিদ্র্যের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুমাইয়ার কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
মেধাবী শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলে, সবার সহযোগিতায় ভালো ফলাফল নিয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েছি। বিশেষ করে আমার চাচা স্বপন মিয়া ও আমার ৩ জন শিক্ষকের অবদান অনেক। শিক্ষকেরা আমাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। তবে অভাবের সংসার হওয়ায় সামনের শিক্ষাজীবন কীভাবে চালিয়ে নেব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
সুমাইয়া আরও বলে, আমি একজন ভালো মানুষ হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। যাতে ভবিষ্যতে আমার মতো যারা অর্থ সংকটে পড়ে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিতে কষ্টে থাকবে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. একরামুল সিদ্দিক বলেন, সুমাইয়ার ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবন আরও মসৃণ করতে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে। শিগগিরই তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করব। সংগ্রামী এই শিক্ষার্থীর পড়ালেখা চালিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২৩
এসএএইচ