ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

অদম্য ইফতু হার মানলেন নিউমোনিয়ার কাছে

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
অদম্য ইফতু হার মানলেন নিউমোনিয়ার কাছে

শাবিপ্রবি (সিলেট): শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মেনে মা-বাবা ও বন্ধুদের কোলে চড়ে, কখনো হুইলচেয়ার বা স্টিলের লাঠিতে ভর করে বেড়ে ওঠা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মো. ইমতিয়াজ কবির ইফতু মৃত্যুবরণ করেছেন।  

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ২-০১৭-১৮ সেশেনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাকালে ইফতুর মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। নিউমোনিয়ার কাছে হার মেনে এ অদম্য মেধাবীর মৃত্যু হয়েছে। এতে শোকে স্তব্ধ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

জানা যায়, জন্মগতভাবেই তার ডান পা বাঁকা ছিল। পরে দেশে-বিদেশে তার চিকিৎসা করানো হয়। পায়ে দেওয়া হয় প্লাস্টার। প্লাস্টার খোলার সময় তার পা ভেঙে যায়। পরে তার দুই পায়েই সমস্যা দেখা দেয়। মেরুদণ্ডের হাড়েও সমস্যা দেখা দেয়। ইফতু সোজা হয়ে বসতে পারতেন না। হাতেও পুরোপুরি শক্তি পেতেন না। বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও ইফতু ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ সেশনে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন তিনি।  

সেখান থেকে স্না্তক শেষ করে গত বছরের জুন মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক জাপানি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি কোডল্যাব এফজেডসির ঢাকা অফিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।

ছেলে ইফতু চাকরি পাওয়ার পর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তার বাবা-মা। ইফতুর মা ইয়াসমিন আক্তার ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রামের কৃষ্ণকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তার বাবা ইনামুল এক সময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালের পর চাকরি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় খণ্ডকালীন চাকরি করছেন। চাকরির পর স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন শুরু করলেও নিউমোনিয়া এসে থমকে দিল ইফতুর পরিবারের স্বপ্ন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী মো. হাসিবুর রহমান বলেন, ইফতুর কষ্ট শেষে এখন সুখ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনায় হয়তো অন্য কিছু ছিল। দীর্ঘ দুই মাস অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বন্ধু চলে গেল (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ আমার বন্ধুকে বেহেশত নসিব করুক।

আশরাফুল আলম নামে আরেক সহপাঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন একজন মানুষ হওয়া সত্যেও কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে নবীন প্রকৌশলী হয়েছিল মাত্র। তার অদম্য ইচ্ছে শক্তি এবং জ্ঞানের কারণে আমরা তাকে স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে তুলনা করতাম।  

তিনি লিখেন, তার মা তাকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। কোলে নিয়ে নিয়ে স্কুল-কলেজে পড়িয়েছেন। মানুষের কথাকে  তোয়াক্কা না করে ইফতুকে মানুষের মতো মানুষ বানিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তার হুইলচেয়ার ঠেলতে ঠেলতে রাস্তা পার করতে করতে তার সঙ্গে আড্ডা দেয় নাই এমন মানুষ খুব কম আছে। আজ ইফতু না ফেরার দেশে চলে গেছে। আর হবে না দেখারে বন্ধু, আর হবে না দেখা।

এদিকে ইমতিয়াজ কবির ইফতুর অকাল মৃত্যুতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। এতে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন বিশ্ববিদ্যাললের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।