ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবি অধ্যাপকের যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবেদনে দেরি, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
ঢাবি অধ্যাপকের যৌন হয়রানির ঘটনার প্রতিবেদনে দেরি, শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি): গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটি দুই মাসেও কোনো প্রতিবেদন না দেওয়ায় তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৬ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এ আল্টিমেটামের ঘোষণা দেন।

চলতি বছরের ৩ মার্চ অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধ যৌন নিপীড়নের অভিযোগ যাচাইয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান এবং সহকারী প্রক্টর সঞ্চিতা গুহকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে দুই মাস পার হলেও এ ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এতে ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিলেও আজকে দুই মাস হতে চলেছে। এখনও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। ফলে আমরা নিপীড়ন বিরোধী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিচার দীর্ঘায়ত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার না হওয়ার আশঙ্কা করছি। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে, প্রশাসন বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীকে যথাযথ বিচার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে অথবা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কমে গেলে লঘু দণ্ড দিয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপককে বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান ও তিনদিনের মধ্যে তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার দাবি করেন। অন্যথায় পুনরায় আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দেন তারা।

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদএর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেন বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবুল মনসুরের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করা হয়। তা ছাড়া সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।

তার আগে নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করে বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগের সংযুক্তি হিসেবে কিছু অডিও রেকর্ড ও স্ক্রিনশট দেওয়া হয়।

অভিযোগ পত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ২০২২ সালে করোনার পর উনাকে আমরা প্রথম ক্লাসে পাই। প্রতি ক্লাসেই তিনি অ্যাসাইনমেন্টের বিষয় নির্ধারণ করতে বলতেন এবং তা অনুমোদনের জন্য সরাসরি ফোন দিতে বলতেন। এ সুবাদে আমি তাকে চারবার ফোন দিই, কেননা তিনি বারবার বিষয় বাতিল করছিলেন। প্রতিবার ফোন দিলে তিনি রাতে কলব্যাক করতেন এবং কমপক্ষে এক ঘণ্টা কথা বলেছেন। এ সময় তিনি ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

নারী শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমার শারীরিক অবয়ব সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। একই সঙ্গে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বিষয়টি সহ্যের সীমার বাইরে যেতে থাকল। উনি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমাকে নজরদারি করতেন। এছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদেরও নজরদারি করতেন এবং তাদের নিয়ে আমার কাছে বিভিন্ন মন্তব্য করতেন।

অভিযোগপত্রে ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, উনার সঙ্গে কথা বলাটা ছিল আমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক। আমি ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করলাম। কারণ আমি ঘুমাতে পারতাম না। উনার বাজে কথাগুলো আমার চিন্তায় আসত। আমি চোখ বন্ধ করলে আজেবাজে স্বপ্ন দেখতাম। আমি প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকতাম। একপর্যায়ে এ যন্ত্রণার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় আমি কাউন্সিলিংও করি।

নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানিতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবেন উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, উনি আমাদের সামনের চেয়ারপারসন। শুধু এ ভয়ে আমার পরিবারের কাছে দেড় বছর আগে থেকে বলতে হচ্ছে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করব না। দরকার হলে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব।

নাদির জুনাইদকে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, উনি পরিচয়ের শুরুতে সুন্দর আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমার সঙ্গে কথোপকথনের সময়ও উনি বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪১ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।