ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: সমৃদ্ধি-সাফল্যের ৫১ বছর

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১২
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: সমৃদ্ধি-সাফল্যের ৫১ বছর

দেশের প্রথম উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ৫১ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫২তে পা দিচ্ছে আগামী শনিবার। এক্ষেত্রে পথিকৃৎ ও সর্বোচ্চ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাপ্রাপ্ত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।



বাকৃবি তার সুদীর্ঘ এ সময় পার করে এসেছে ক্রমাগত সাফল্যের পথ বেয়ে। যা জাতীয় জীবনের এক তাৎপর্যময় ঘটনা।

কৃষি শিক্ষা ও উন্নয়ন গবেষণার পথিকৃৎ
কৃষিই আমাদের কৃষ্টি। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ়রূপে গড়ে তুলতে ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের ধারণাকে সামনে রেখে উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার দ্বার উন্মোচন ছিলো জাতির একান্ত প্রত্যাশা। কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও স¤প্রসারণের পথিকৃৎ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ এমন একটি পথিকৃৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষা, গবেষণা প্রশিক্ষণ ও স¤প্রসারণের মতো বহুমাত্রিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের চাহিদা ও সমস্যা মোকাবিলার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সব সময় তৈরি থাকতে হয়। নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয় এ পর্যন্ত যেসব সাফল্য অর্জন করেছে, তা উল্লেখযোগ্য। এ উন্নয়নধারা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আগামীতে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

যথাযথ পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এর শিক্ষা ও গবেষণাসহ যাবতীয় কার্যাবলীর বিকাশও অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্য দিয়েই  কৃষি তথা জাতীয় উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও অবদান আরো ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়Ñ এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 
ময়মনসিংহে অবস্থিত তদানীন্তন পূর্ব  পাকিস্তান ভেটেরিনারি কলেজকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। মানসম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষাদান এবং কৃষি উন্নয়নের গুরু দায়িত্ব বহনে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।

অবস্থান
ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে চিরসবুজে ঘেরা নৈসর্গিক পরিমণ্ডলে প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাকৃবি ক্যাম্পাস। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে এ ক্যাম্পাসের অবস্থান।

শিক্ষা কার্যক্রম
ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে  দু’টি অনুষদ নিয়ে ১৯৬১ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমানে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৪টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। ৪২টি শিক্ষা বিভাগে তিন সেমিস্টার মেয়াদে এমএস ডিগ্রি কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে ৪০টি বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কমিটি স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজটি জামালপুরের মেলান্দহে অবস্থিত।

উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েট সংখ্যা
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৩ হাজার ৩৭৮ জন স্নাতক, ১৩ হাজার ৬৮ জন এমএসসি/এমএস এবং ৩৮৭ জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পর্যন্ত ৬টি সমাবর্তনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ গ্রাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের জনক নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী ড. নরম্যান ই. বোরলগকে সম্মানসূচক ডিএসসি (অনারিজ কজা) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনবল
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৫ হাজার ৪৬৩ জন। তার মধ্যে ৩ হাজার ৮০৭ জন স্নাতক, ১ হাজার ৩৩৪ জন এমএস এবং ৩২২ জন পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক ছাত্রী। মোট ৫৪৮ জন শিক্ষক, ৪৩৬ জন কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৬১৬ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন। শিক্ষকদের মধ্যে ২৫০ জন অধ্যাপক, ১১৬ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ১২৩ ও ৬৩ জন যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক।

ভৌত স্থাপনা
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারিত ভবন, জিটিআই ভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১২টি হল রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি হল ছাত্রীদের জন্য।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি ও পরিবেশ বিজ্ঞানসহ প্রাগ্রসর গবেষণার লক্ষ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, সিড প্যাথলজি সেন্টার, ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিক ল্যাব, আইপিএম ল্যাব, বায়োটেকনোলজি ল্যাব, ভেটেরিনারি ক্লিনিক এবং ফিশ নিউট্রিশন ও ডিজিজ ল্যাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইনষ্টিটিউট অব এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট। রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন (প্রায় দুই হাজার আসনবিশিষ্ট)।

প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিরল বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক, দেশের প্রথম কৃষি মিউজিয়াম এবং উপমহাদেশের প্রথম ফিশ মিউজিয়াম। একটি বিশাল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ রয়েছে জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল শাখা, সুসজ্জিত অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির। রয়েছে শহীদ মিনার, মুক্তিয্দ্ধু স্মৃতিস্তম্ভ, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিজয়-৭১ এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্ত্বর।

গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য
বাকৃবির গবেষণা কার্যক্রম দু’টি প্রধান ধারায় পরিচালিত হয়ে থাকে। এর একটি ডিগ্রিভিত্তিক অপরটি প্রকল্পভিত্তিক। মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ডিগ্রি অর্জনের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে।

পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোনো বাইরের সংস্থার অর্থানুক‚ল্যে অপরাপর সমস্যা সমাধানমূলক প্রকল্পের গবেষণাকাজ পরিচালিত হয়।  

গবেষণা প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) এর তত্ত্বাবধানে ১ হাজার ৪২টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে চলমান প্রকল্পসংখ্যা ২০১টি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি,  রাইজোবিয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল, মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণে মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগির স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি; হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল,  কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ব্যবহার, হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প,  জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন।  

প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম
কৃষি খামার, গৃহাঙ্গণ ও সমষ্টিগত উন্নয়নকল্পে পরিচালিত সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনধারার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্রের (বাউএক) অন্যতম লক্ষ্য, কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যাবলীতে নিয়োজিত গ্র্যাজুয়েট, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও গবেষকদের জন্য চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বাংলাদেশের সকল এলাকার জন্য উপযোগী এমন একটি কার্যকর সম্প্রসারণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা, যা অঞ্চল বিশেষে  সহজেই বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাকৃবির জিটিআই, বাউএক, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও অনুষদসমূহ তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৪৪ হাজার ৯৫৭ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার মধ্যে ১৬ হাজার ৭২৩ জন খামারি, ৪ হাজার ৭৫৩ জন মাঠকর্মী এবং ২৩ হাজার ৪৮১ জন গ্র্যাজুয়েট ও বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী রয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে জিটিআই নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

শিক্ষাতিরিক্ত কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের মননশীলতা বিকাশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের আওতায় বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, নাট্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ডিবেটিং ক্লাব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা স্কাউটিং, বিএনসিসি ও বাঁধনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ভবিষ্যত জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিতে নিজেদের তৈরি করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চিরঞ্জীব শহীদ
১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হানাদার বাহিনী ও তার এ দেশীয় দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় হারায় ১৯ জন সাহসী বীর সন্তানকে, যারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অকাতরে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা চিরতরে ছেড়ে চলে গেলেও এই চিরঞ্জীব শহীদরা বাকৃবি পরিবারের মাঝে নানাভাবে বেঁচে আছেন। তাদের স্মরণে নির্মিত স্থাপনা আগামী দিনগুলোতেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি অনুভব করতে সহায়তা করছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে। হলগুলো হচ্ছেÑ শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহসান হল ও শহীদ জামাল হোসেন হল।

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু: সেকশন অফিসার, জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতর, বাকৃবি, ময়মনসিংহ

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।