ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সোনাগাজীর নাজিরপুর মাদরাসায় অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চেয়ে ইউএনওকে চিঠি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৮ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৪
সোনাগাজীর নাজিরপুর মাদরাসায় অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চেয়ে ইউএনওকে চিঠি

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা অনিয়ম-দুর্নীতিতে ভুগছে বলে অভিযোগ মিলেছে। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক ঋণের চাপে পড়লেও তা থেকে উদ্ধারে মাদরাসা প্রশাসনের আশানুরূপ কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

উল্টো প্রতিষ্ঠানকে ঋণের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ আছে খোদ প্রতিষ্ঠানটির সুপারসহ কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে।

প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানের অবনতি ঘটছে, বছরজুড়ে শিক্ষকদের বেতনও বকেয়া রয়ে যাচ্ছে। যার পেছনে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে দাবি করে এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে আবেদন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর পক্ষে এই আবেদন করেছেন কেফায়েত শাকিল নামের এক সাংবাদিক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন মার্কেটসহ নাজিরপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার বহু সম্পদ রয়েছে। মাদরাসার মার্কেট থেকে ভাড়াও আসে। তবু শিক্ষকদের এক বছরের বেশি সময় ধরে বেতন বাকি। যা শিক্ষার মান অবনতিতে ভূমিকা রাখছে। আর এই সমস্যা কাটাতে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জমি বিক্রিকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছে।

অভিযোগে বলা হয়, মাদরাসার মালিকানাধীন একটি জমিতে সম্প্রতি একটি ইটের ঘর তোলা হচ্ছে। এই ঘর করার ক্ষেত্রে কমিটির বড় একটি অংশের দ্বিমত থাকলেও একটি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে ঘরটি তৈরি করছে। কোনো নিয়ম না মেনে নামমাত্র ভাড়ায় জায়গাটিতে তাদের ঘর করার অনুমতি দিয়েছেন মাদরাসার সুপার।

মাদরাসার অনিয়মগুলোর মধ্যে- প্রভাব খাটিয়ে কমিটির সদস্যদের একটি অংশকে মিটিংয়ে ঢুকতে না দেওয়া, কমিটির সদস্যদের অনুমোদন ছাড়া যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া, দোকান ভাড়া কমিটি ও প্রকল্প কমিটির অনুমোদন না নিয়েই ভবন তৈরির কথা আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে আবেদনকারী কেফায়েত শাকিল বলেন, সম্প্রতি মাদরাসার জমিজমার অপব্যবহার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। একপক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এলাকার একমাত্র দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমার মনে হয়েছে কাজ করা দরকার।

তিনি বলেন, মাদরাসার মালিকানাধীন অনেক দোকান কয়েক বছর ধরে বন্ধক আছে। সেগুলো না ছাড়িয়ে নতুন একটি ঘর তোলা হচ্ছে। ৮-১০ ডিসিম জমিতে নতুন করে তুলতে যাওয়া ঘরটি মাত্র চার হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে বলে জানতে পারছি। অথচ এখানে ছোট্ট টিনের ঘর থেকেই ভাড়া আসতো তিন হাজার টাকা। এখন সেটি ভেঙে আরও বড় জায়গা নিয়ে পাকা ঘর করে মাত্র চার হাজার টাকায় নাকি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এটি আমার কাছে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে। কমিটির একাংশের অভিযোগ, এই দোকান ঘর করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সদস্যের মতও নেওয়া হয়নি। আমি এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছি।
 
তিনি আরও বলেন, আমি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেইনি। আমি এসব অভিযোগের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছি। কারণ দোষ যারই থাকুক তা বের করে প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করা দরকার। আশা করি উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু তাহের বলেন, আমার এখানে কিছুই করার নেই। কমিটির লোকজন আমাকে বাধ্য করেছেন। আমি তো নিরীহ মানুষ। আমি কী করবো?

আর মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, কমিটির ওপর ব্যক্তিগত আক্রোশ ছাড়া এসব কিছু নয়৷ আমরা কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করুক। দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা মাথা পেতে নেব।

এ বিষয়ে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুদিন আগে অভিযোগটি পেয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। কোনোভাবে একটা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ এভাবে অপব্যবহার হতে দেওয়া হবে না।

অভিযোগ দেওয়ার পর বিল্ডিং তৈরির কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে বলে জানানো হলে তিনি বলেন, কাজ এখনই বন্ধ করার বিষয়ে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি।  প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অপব্যয় হতে দেবো না।

সবশেষ দাখিল পরীক্ষায় মাদরাসাটি থেকে ৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪১ জন। ২০২৩ সালেও ২২ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে। শিক্ষার মানের অবনতির কারণে দুই বছরে শতাধিক শিক্ষার্থী এই মাদরাসা ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৪
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।