ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ট্যাক্সের নামে তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেন অধ্যক্ষ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
ট্যাক্সের নামে তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেন অধ্যক্ষ

ঢাকা: নিজের অবস্থান টেকাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে ‘ট্যাক্স’ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দেওয়াসহ নানা রকম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠেছে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত ডক্টর মালিকা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জালালউদ্দিন মিঞার বিরুদ্ধে।  

এ টাকা দিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘পৌর করের’ নামে এক হাজার টাকা নেন।

তবে পরে কিছু শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দিলেও ফান্ড না থাকার অজুহাত দিয়ে বাকিদের টাকা এখনও ফেরত দেননি জালালউদ্দিন মিঞা।  

কলেজের শিক্ষকদের অভিযোগ, অন্য কোনো কলেজের কর্তৃপক্ষ এত বিপুল পরিমাণ অর্থ দেয়নি। অথচ তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করে বা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ দরকষাকষি না করে গত বছরের জানুয়ারি মাসে কলেজ ফান্ড থেকে এ বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে দেন।

জালালউদ্দিন মিঞার এসব দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কলেজের অন্তত ২৫ জন শিক্ষক।

কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকে জানান, পৌর কর নামে তাদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন। তিনি জানান যে মেয়র তাপসকে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালা অনুযায়ী, এ খাতে কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই।  

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন বলেন, আমাদের একটা নতুন ভবন হয়েছে। রিঅ্যাসেসমেন্টসহ কোটি টাকা ট্যাক্স আসে। সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করতে বলা হয়। অ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতেই এ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ টাকা যেহেতু কলেজ দিয়েছে, সেহেতু ছাত্রদের থেকেই নেওয়া হয়েছে।

কলেজের শিক্ষকদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত ফান্ড থাকা সত্ত্বেও নন-এমপিও শিক্ষকদের স্কেল অনুযায়ী ন্যায্য বেতন না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে খুব সামান্য বেতন প্রদান করে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করেছেন অধ্যক্ষ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায় এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে শুধুমাত্র বেসিক স্কেল দেন।  

তারা বলেন, এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের তুলনায় বেতন কম দিয়ে প্রায় ছয় বছর ধরে ইচ্ছেকৃতভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করে তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন অধ্যক্ষ।  

শিক্ষকরা বলেন, নিজের পছন্দের দুজন শিক্ষককে পরীক্ষা কমিটিতে বসিয়ে কলেজে অনুষ্ঠিত সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও ডিগ্রি পরীক্ষাসহ কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের খুব সামান্য সম্মানী দিয়ে নিজে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষকরা বারবার পরীক্ষা কমিটিসহ সব উপ-কমিটি পুনর্গঠনের দাবি করলেও তিনি নিজের ইচ্ছেমতো সব উপ-কমিটি বহাল রেখেছেন।  

তাদের অভিযোগ, পরীক্ষার ফর্ম পূরণের সময় পরীক্ষার্থীদের কাছে নিকট থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছেন অধ্যক্ষ। শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন তিনি। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের সামনে অশালীন, অশ্লীল ও ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করেন। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত দুইজন শিক্ষককে সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে চাকরিতে বহাল রেখেছেন। তিনি কথায় কথায় শিক্ষকদের শোকজ দেন। শিক্ষকদের সময়মতো প্রমোশন থেকে বঞ্চিত করেন। একজন সহযোগী অধ্যাপককে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলেজের পরীক্ষা কমিটি থেকে শুরু করে অন্য সব ধরনের কমিটি দীর্ঘদিন ধরে পুনর্গঠন করছেন না অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন। যদিও এসব কমিটি প্রতিবছর পুনর্গঠন করার কথা। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন বলেন, প্রতিবছর কমিটি পুনর্গঠনের নিয়ম নেই। তবে অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি বছর এসব কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কিন্তু তিনি এসব কমিটি নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে চালাচ্ছেন।  

শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমার কোনো কিছু করার নেই। গভর্নিং বডির সাবেক চেয়ারম্যান চলে যাওয়ার আগে আমি সব শিক্ষককে স্কেলে দিতে অনুরোধ করলে সবাইকে স্কেলে আনা হয়। আমি কোনো শিক্ষককে আলাদা করে দেখিনি। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্তদের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেতন স্কেল কাউকে ১০ শতাংশ, কাউকে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে আমার একার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।  

তিনি বলেন, আমার চোখে সবাই সমান। কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করিনি। তবে কেউ কাজ না করলে তাকে তা করতে বললে যদি খারাপ আচরণ করা হয়, তাহলে কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আবদুল হাই জিন্নাহ বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।