ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় একই সেটের প্রশ্নের ক্রমধারায় ভুল এবং ৪টি প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিসহ একাধিক অসঙ্গতির তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অসঙ্গতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমম্বয়কারী ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলছেন, ‘খুব অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে এসব অসঙ্গতি হয়েছে। এগুলো আইডেন্টিফাইয়েবল (শনাক্তযোগ্য)’।
পরীক্ষার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ সেটের একটি কেন্দ্রের ইংরেজি প্রশ্নে ১৭ নম্বরে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘what the wise do in the beginning fools do______ the end.’। কিন্তু আরেকটি কেন্দ্রে একইসেটের প্রশ্নে ১৭ নম্বরে প্রশ্ন করা হয়েছে ‘The professor set some project work_____the end of the semester.’ প্রশ্নটি। প্রথম কেন্দ্রের প্রশ্নের ১৭ নম্বর এমসিকিউটি অন্য কেন্দ্রের প্রশ্নের ১৮ নম্বরে ছাপা হয়েছে। এভাবে ইংরেজি অংশের ১৭ থেকে ২৪ নম্বর পর্যন্ত এমসিকিউ প্রশ্নে একই সেটে ভিন্ন ক্রমধারা দেখা গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ওএমআর অংশটি স্ক্যান করে কম্পিউটারের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। কম্পিউটারকে একটি সেটের জন্য একটি উত্তরপত্র দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ভুল-শুদ্ধ নির্ণয় করে কম্পিটার নম্বর দেয়। তবে এক সেটের প্রশ্নে এমসিকিউর ক্রমধারা ঠিক না থাকলে যেসব শিক্ষার্থীর হাতে ভুল প্রশ্ন গিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রশ্নপত্রের ‘এ’ সেটে একাউন্টিং অংশে ২৫ নম্বরে প্রশ্ন এসেছে, ‘তাসনু ট্রেডার্স ভুলক্রমে ৮০,০০০ টাকার অনুপার্জিত সেবা আয়ের অর্জনের সমন্বয় সাধন করেনি। আর্থিক বিবরণীতে এর ফলাফল কী হবে?’। একই প্রশ্ন ৩৩ নম্বরে পুনরায় ছাপা হয়েছে। সেটের ২৬ নম্বরে ‘মাহরিন ও মেহনাজ একটি অংশীদারি ব্যবসায়ের দুইজন অংশীদার। তাদের মুনাফা বণ্টন অনুপাত ৫:২। তারা স্নেহাকে ১/৪ অংশ মুনাফা বণ্টনের চুক্তিতে ব্যবসায়ে নতুন অংশীদার হিসাবে গ্রহণ করে। তাদের মুনাফার নতুন অনুপাত কত?’ প্রশ্নটি এসেছে। একই প্রশ্ন ৩৪ নম্বরে পুনরায় ছাপা হয়েছে।
সেটের ২৭ নম্বর প্রশ্ন এসেছে ‘কোনটি বিলম্বিত মুনাফা জাতীয় খরচ?’। এই প্রশ্নটি ৩৫ নম্বরে পুনরায় ছাপা হয়েছে। এছাড়া ২৮ নম্বরে ‘নিট বিক্রয় ও মোট মুনাফার পরিমাণ যথাক্রমে ৩০,০০০ টাকা এবং ৬,০০০ টাকা হলে ক্রয় মূল্যের উপর মুনাফার হার কত?’ প্রশ্ন এসেছে। এটি ৩৬ নম্বর প্রশ্নে পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
একই সমস্যা ‘বি’ সেটের প্রশ্নে হয়েছে। এই সেটে ২৯ নম্বর প্রশ্নটি ৩৩ নম্বরে, ৩০ নম্বর প্রশ্নটি ৩৪ নম্বরে, ২৮ নম্বর প্রশ্নটি ৩২ নম্বরে এবং ৩১ নম্বরটি ৩৫ নম্বরে পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
‘বি’ সেটের যেসব প্রশ্নে পুনরাবৃত্তি হয়নি, সেসব প্রশ্নে ২৮ নম্বরে ‘রূপান্তর খরচের সমষ্টি......?, ২৯ নম্বরে ‘আরডি ফুড কোম্পানির বিক্রিত পণ্যের বায় ৫,৫০,০০০ টাকা। প্রারম্ভিক মজুদ পণ্য ২,০০,০০০ টাকা এবং সমাপনী মজুদ পণ্য ২,৫০,০০০ টাকা। ক্রয়কৃত পণ্যের মূলা কত?’ ৩০ নম্বরে ‘একটি খরচ যা পূর্বে সম্পদ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, এখন খরচ হিসেবে স্বীকৃত করা হয়। তাহলে নিট মুনাফার উপর কী প্রভাব পড়বে?’ এবং ৩১ নম্বরে সমাপনী জাবেদার মাধ্যমে কোন হিসাব বন্ধ করা হয়?’ প্রশ্নগুলো এসেছে।
যা বলছেন পরীক্ষার প্রধান সমম্বয়কারী
প্রশ্নপত্রের ‘এ’ সেটের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার প্রশ্ন ‘বি’ সেটে এবং ‘বি’ সেটের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার প্রশ্ন ‘এ’ সেটে ছাপানোর কারণে এই ভুল হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমম্বয়কারী ও অনুষদের ডিন ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ক্রমধারার বিষয়ে আপনারা যা বলছেন, সেটি একটি হিউম্যান এরর (মানবিক ভুল)। ‘এ’ সেটের দুই নম্বর পৃষ্ঠা ‘বি’ সেটে ছাপা হয়েছে, আবার ‘বি’ সেটেরটা ‘এ’ সেটে ছাপা হয়েছে। তবে সেটা সামান্য কয়েকটা প্রশ্নে।
ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম আরও বলেন, যেহেতু ‘এ’ সেটের মধ্যে ‘বি’ সেটের প্রশ্নের পৃষ্ঠা এসে গেছে, তাই চারটা প্রশ্ন রিপিট দেখা গিয়েছে এবং ক্রমধারায় সমস্যা হয়েছে। এটা ‘এ’ এবং ‘বি’ দুই সেটেই হয়েছে। অল্পকিছু সংখ্যক প্রশ্নে। এটি আইডেন্টিফায়েবল। আমরা এটিকে শনাক্ত করে ফেলছি। তারপর আমরা এর সমাধান করে ফেলছি। যদিও এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সবগুলো চিহ্নিত করা যাবে।
তিনি বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি হবে না। তারা সুবিধা পাবে। আমরা জানি এটা কীভাবে বের করব (যেই অংশের কাছে ভুল প্রশ্ন গেছে), সেই পার্টটা তো আমরা পেয়েই গেছি। আমরা ইতোমধ্যে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, কোন হলে, কোন কেন্দ্রে, সেই হলগুলোতে আলাদা রিড করাচ্ছি, সেই প্যাটার্ন দিয়ে নিচ্ছি। ওই প্যাটার্ন দিয়ে আমরা বের করে ফেলব।
কোন প্রক্রিয়ায় শনাক্ত করা হবে জানতে চাইলে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমম্বয়কারী বলেন, এটা জানানো যাবে না। তবে আমি এতটুকু নিশ্চিত করছি, কোনো শিক্ষার্থীর সাথে কোনো বৈষম্য করা হবে না। যারা সঠিক প্রশ্ন পেয়েছে, তাদের সাথেও করা হবে না, যাদের কাছে ভুল প্রশ্ন গিয়েছে, তাদেরও পূর্ণ সুবিধা দেওয়া হবে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছেও দায়বদ্ধ।
কত শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে ভুল প্রশ্ন গেছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো জানি না। তবে খুব বেশি নয়। শনাক্ত করার পর আমরা বুঝব।
এর আগে দুপুরে এক সাক্ষাৎকারে ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম বলেন, আমার ফ্যাকাল্টির কেন্দ্রে আমি এ ধরনের একটিও পাইনি। কিন্তু ঘটনা হলো কিছু প্রশ্নে, সেটি হয়তো ৫০ থেকে ৬০টি প্রশ্নে হবে। ‘এ’ সেটের প্রশ্ন ‘বি’ সেটে চলে গেছে এবং ‘বি’ সেটের প্রশ্ন ‘এ’ সেটে চলে এসেছে। ১ শতাংশ শিক্ষার্থীদের সাথে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ছাত্রদের কোনো ক্ষতি হবে না, এটি আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আমি এটিকে একটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে টেক কেয়ার করব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৫
এফএইচ/এমজেএফ