রংপুর: নাম আম্বিয়া আক্তার শোভা; সবার কাছে শোভা নামেই পরিচিত। শোভা নামে সবার কাছে প্রিয় হলেও জন্মের পর থেকে নিজেই ‘অশোভা’! শৈশব থেকেই হাঁটতে পারে না সে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আনিছার রহমানের মেয়ে শোভা। শারিরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে তিনি এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) অংশ নিচ্ছে।
কিন্ত একটি হুইল চেয়ার না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাকে। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের পরীক্ষা দিতে দুই কিলোমিটার পথ হাতে ভর করেই কেন্দ্রে যান।
অস্বচ্ছল পরিবারে দুই ভাই ও এক বোনের সংসারে স্থানীয় স্কুলের পিয়ন বাবা আনিছার রহমানই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সামান্য বেতনে যেখানে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেই নানা টানাপোড়েন হয় বাবা আনিছার রহমানের, সেখানে মেয়ের জন্য হুইলে চেয়ার কেনা যেন বিলাসিতা।
পেশায় গৃহিণী মা দুলালী বেগম সবই প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সারাক্ষণই দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।
শোভার মা জানান, জন্মের পর থেকেই তারা মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়েন। অভাবের সংসারে প্রতিবন্ধী মেয়ে যেনো আর একটি নতুন বোঝা!
নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেন তিনি। শৈশব থেকেই পাড়ার ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া দেখে কান্নাকাটি করতেন শোভা।
মা দুলালী বেগম বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে চলাফেরার সমস্যার কথা ভেবে প্রথমে মানা করি। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছা-শক্তি দেখে তাকে বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটার দূরের শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরাও আগ্রহ দেখে শোভাকে উৎসাহ দেন। সেখান থেকে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়।
সেখান থেকে জিপিএ ৩.৫০ পেয়ে এসএসসি পাশ করে খালাশপীর বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়।
শোভার বাবা আনিছার রহমান জানান, শোভার দুই হাতে ভর দিয়ে কলেজ যাতায়াত করতো শোভা। সে সময় শোভার চলাফেরায় সাহায্যের হাত বাড়ান কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা শোভার হাতে একটি হুইল চেয়ার তুলে দেন। বর্তমানে তার হুইল চেয়ারটি নষ্ট হয়ে গেছে।
কলেজ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার পাবার কথা থাকলেও শোভা বাংলানিউজকে বলেন, কষ্ট করে জোগার করা বাবার টাকায় পড়াশুনা চালিয়েছি, কলেজ কর্তৃপক্ষ সবকিছু ফ্রিতে দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কথাই রাখে নি তারা। শুধুমাত্র উপবৃত্তি দিয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে খালাশপীর বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মোমিনুল ইসলাম রনতু শোভার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন শোভা। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ভালো ফল নিয়েই শোভা ছড়াবেন অদম্য শোভা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৪