ঢাকা: গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে যে সব পোকার আক্রমণ হয়েছে তা নিয়ে মানুষের আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। তবে পোকাটি উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান তারা।
গত কয়েক দিনে কলেজ ক্যাম্পাসে লাখ লাখ পোকার আক্রমণের পর খবর পেয়ে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে শুক্রবার জানায় আক্রান্ত পোকার নাম জায়ান্ট মিলিবাগ।
বহু উদ্ভিদভোজী এই পোকার বৈজ্ঞানিক নাম Drosicha mangiferae, যার পরিবার- Monophlebidae এবং Homoptera বর্গ।
কলেজের অধ্যক্ষ ইফফাত আরা নার্গিস জানিয়েছেন, লাখ লাখ পোকা কলেজ ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে। পোকাগুলোর অনেকগুলো পা আছে। বিশাল রেইনট্রি গাছের সর্বত্র ভরে আছে। গাছ থেকে হেঁটে এসে তারা ক্লাসরুম, করিডোর, নর্দমাসহ সর্বত্র বিচরণ করছে। একই ধরনের পোকা আশেপাশেও দেখা যাচ্ছে।
কয়েকজন শিক্ষকও পোকায় আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, পোকাপড়া স্থান লাল হয়ে যায় এবং ফোস্কা ওঠে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষামন্ত্রীর শরনাপন্ন হলে শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার কলেজ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম পাঠানোর জন্য বলেন।
পর্যবেক্ষণ জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মো. শাদাত উল্লা কীটতত্ত্ব বিভাগের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ টিম ক্যাম্পাসে পাঠান।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল লতিফ, অধ্যাপক ড. মো. রজ্জব আলী, অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একজন ফার্ম সুপার এবং একজন সহকারী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞ টিম জানায়, পোকাগুলো ১ সে.মি বা তার অধিক লম্বা এবং ডিম্বাকৃতির। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও বয়স্ক পোকা আম, কাঁঠাল, পেঁপে, রেইনট্রি, লেবু জাতীয় ফলজ উদ্ভিদে আক্রমণ করে।
তারা আরও জানান, এটা মানুষের ক্ষতির কারণ না হলেও কিছু কিছু উদ্ভিদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই পোকা উদ্ভিদের কচিপাতা, নতুন শাখা, ফুলের কুঁড়ি এবং ফলের রস চুষে খায়। যায় ফলে আক্রান্ত গাছটি নিস্তেজ হয়ে মায়া যেতে পারে।
কার্বোসালফান কিংবা কনফিডার স্প্রে করলে আক্রান্ত গাছকে রক্ষা করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. রজ্জব আলী জানান।
তিনি জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ায়ি প্রথম সপ্তাহ পোকাগুলো মাটির নীচে অবস্থিত ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে খাবারের জন্য আশপাশের পোষক গাছের কচিপাতা, নতুন শাখা, কান্ড, ফুলের কুঁড়ি প্রভূতিতে অবস্থান করে। এ অবস্থায় পোকাগুলো মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্ত গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে জীবন ধারন করে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় পৌঁছে। এরপর মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পোকাগুলো পূর্ণ বয়স্ক হয়ে ডিমপাড়ার জন্য উপযোগী জায়গার খোঁজে মাটিতে নেমে আসে। তারা সাধারণত মাটির নিচে ডিম পারে।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে চত্বর সম্পূর্ণ পিচ ঢালা থাকায় পোকাগুলো ডিমপাড়া জন্য মাটি খুঁজে না পেয়ে এই দিক সেদিক ছুটাছুটি করছে।
রজব আলী বলেন, আক্রান্ত গাছের চারপাশ গর্ত করে কেরোসিন মিশ্র পানি দিয়ে রাখলে পোকাগুলো নামার সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারে।
পোকার প্রতিকার সর্ম্পকে রজ্জব আলী জানান, প্রাদুভার্ব দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত গাছে কীটনাশক যেমন- কার্বোসালফান প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি লিটার অথবা কনফিডার প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি লিটার স্প্রে করতে হবে।
এই পোকার প্র্রতিটি থলেতে ২০০-৩০০টি ডিম থাকে। এই ডিমগুলো মাটির নিচে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এরা বাংলাদেশের আবহাওয়া একটা নিদিষ্ট সময় কিছু নির্দিষ্ট গাছে আক্রমণ করে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগে এ পোকা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকবার গবেষণা হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই পোকাগুলো আক্রামণ করছে। এই পোকাগুলো পরিবহনের মাধ্যমে আফ্রিকা কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিদেশ থেকে আসা এবং প্রাকৃতিক শক্রমুক্ত অবস্থায় এই পোকা অতি দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিভিন্ন গাছে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৪