ঢাকা: স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে গড়িমসি ও দুর্নীতি বিষয়ে বাংলানিউজে একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর নিজেদের গা বাঁচাতে শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘March to Banglanews24.com’ নামে একটি ইভেন্ট পেজ খোলা হয়েছে।
ইভেন্ট পেজে বলা হয়েছে, বুধবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শুক্রাবাদের অবৈধ শাখা ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বাংলানিউজ কার্যালয় ঘেরাও করতে রওনা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রায় ৩- ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে ব্যাবহার করে বাংলানিউজ কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি সফলের জন্য ডাক দেওয়া হয়েছে ইভেন্টের আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
প্রতিবেদনের পটভূমি
যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভাল না থাকলেও আশুলিয়ার দত্তপাড়ায় প্রাসাদসম অট্টালিকা তৈরি করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেখানে এখনো শিক্ষার্থীদের ক্লাস হয় না। বরং রাজধানীর ধানমন্ডি ও উত্তরায় ভাড়া বিল্ডিংয়ে অবৈধ শাখা ক্যাম্পাসে ক্লাস নেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। অথচ উন্নয়ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের বেতন আদায় করে কর্তৃপক্ষ।
বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সকল বিভাগ স্থানান্তরের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাংলানিউজের কাছে শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের এসব অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থায়ী ক্যাম্পাসকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যাবহার করে রাজধানীর উত্তরার তিনটি ভবনে, শুক্রাবাদের দু'টি ভবনে ও ধানমন্ডির একটি ভবনে ক্লাস কার্যক্রম চালাচ্ছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার সাহস নেই তাদের।
৮-১০ লাখ টাকা দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অধিকারের কথা বললে রয়েছে ফেল করিয়ে সেমিস্টার পিছিয়ে দেওয়ার মতো হুমকি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার বিষয়টি অনুসন্ধান করে বাংলানিউজ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ‘ড্যাফোডিল কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়!’
আর এ প্রতিবেদনের কারণে বেকায়দায় পড়ে নিজেদের অনিয়ম ঢাকতে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে ড্যাফোডিল।
যেভাবে উস্কে দিচ্ছে
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বাংলানিউজের কার্যালয় ঘেরাও করতে শিক্ষার্থীদের উস্কে দিচ্ছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর দফায় দফায় বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান সবুর খানের লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত কয়েকজন শিক্ষক।
প্রতিবেদনের ফলে শিক্ষা বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এ আশঙ্কায় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করার।
তবে কোনোভাবেই বাংলানিউজ ‘আপোস’ না করলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত অনলাইন নিউজপোর্টালটির কার্যালয় ঘেরাওয়ের। এ ব্যাপারে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গেও আলাপ করেন তারা। এ হামলা কার্যক্রম সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক লাখ টাকা বাজেটও চাওয়া হয়েছে।
ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বুধবার ১৫-২০টি বাসে করে বাংলানিউজ কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টায় রওনা হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার শিক্ষকরা এ যাত্রা সফল করতে ক্লাসে-ক্লাসে প্রচারণাও চালিয়েছেন। এছাড়া যাত্রায় অংশ না নিলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে ঠাণ্ডা হুমকিও দিয়েছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
** ড্যাফোডিল কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়!
বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪