ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আত্মীয়করণে মান হারাচ্ছে ড্যাফোডিল!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৪
আত্মীয়করণে মান হারাচ্ছে ড্যাফোডিল!

ঢাকা: শ্যালক-দুলাভাইসহ চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজনে ভরে ফেলা হয়েছে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষা ও প্রশাসন বিভাগ। আত্মীয়করণের এই প্রক্রিয়ায় অযোগ্যদের হাতে পড়ে বিনষ্ট হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

দেশে আইটি শিক্ষার প্রসারে সরকারের অগ্রাধিকার থাকলেও এমন কিছু অযোগ্য মালিক ও কর্তৃপক্ষের হাতে পড়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার মানে নিম্নগামী হচ্ছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির ধুয়া তুলে উৎসাহী তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে কাড়িকাড়ি টাকা।

প্রাথমিকভাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবসায় নেমে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাড়পত্র নিয়ে স্রেফ ব্যবসা হাতাচ্ছে ড্যাফোডিল।   
 
বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির চেয়ারম্যান ডেফোডিল কম্পিউটার্সের মালিক এবং ঢাকা চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) এর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি আবদুস সবুর খান।

ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, এই সবুর খানের এক শ্যালক ইমরান হোসেন বোর্ড অব ট্রাস্টিতে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দখলে রেখেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রারের (প্রশাসন) পদ। তাকে সবাই অগোচরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পাওয়ার হাউস’ বলেই ডাকেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে থাকলেও এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারই ইশারা ইঙ্গিতে চলে প্রশাসন। রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান রয়েছেন নামকাওয়াস্তে। নিয়োগ থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী সবকিছুই ইমরানের নিয়ন্ত্রণে।
 
অপর শ্যালক সাব্বির আহমেদ রয়েছে পরিচালক (উন্নয়ন) পদে। পরিচালক (অ্যাকাউন্টস) হিসেবে আছেন দুলাভাই মমিনুল হক মজুমদার।

প্রভাবশালীদের মধ্যে আরো রয়েছেন দুই খালাতো ভাই শাহীন ও নাজিম। এরাও পদে ভারী। দু’জনেই রয়েছেন সহকারী পরিচালক (উন্নয়ন) হিসেবে।
 
এছাড়া রেজিস্ট্রার, বোর্ড অব ট্রাস্টি, একাডেমিক কমিটি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজনকে। এদের মধ্যে মামা আর চাচার পরিবারের স্বজনরাও রয়েছেন।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হলেও মূলত শ্যালক আর স্বজনদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত টাকা গুনছেন সবুর খান।

আত্মীয়করণের চাপে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় হারাচ্ছে মান ও গৌরব।

তবে নামমাত্র রেজিস্ট্রারের পাশাপাশি নামমাত্র উপাচার্যও রয়েছেন। উপাচার্যের হাতেও কোন ক্ষমতা নেই। তার নিজের একটি টাকাও বরাদ্দ বা খরচের অনুমতি নেই। সবকিছুতেই সবুর খানের শ্যালক ইমরানের কাছে ধর্না দিতে হয় তাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কমিটি হলে তাতেও অবধারিতভাবে ইমরাণ শীর্ষে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন বা সিনিয়র শিক্ষকরা থাকেন সদস্য হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির একজন সাবেক শিক্ষক বাংলানিউজের কাছে এমন অভিযোগের কথা জানিয়ে বলেন, অনেক শিক্ষকই তাদের নিজের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে এগুলো মেনে নেন। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করলেই বিপদ।  
 
উপাচার্যও যেনো কাঠের পুতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের চেয়ে সবুর খানের পরিবারের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হয় সবার আগে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক, যিনি ড্যাফোডিলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন, তিনি বলেন, যে কোন আর্থিক বিষয়ে ইমরানের একক নিয়ন্ত্রণ। আর্থিক বিষয়ে উপাচার্যের কোন এখতিয়ার নেই। বরং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটিগুলোতেও মালিকের পরিবারের সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করতে বাধ্য হন। মালিকের পরিবারের সদস্যরা কমিটির মিটিং-এ নিজেদের মত প্রতিষ্ঠা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক চাকরি করতেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে। চেয়ারম্যান এবং তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি তার আগের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ইমরানকে আমি একবার রুম থেকে বের করে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম ‘জাস্ট গেট আউট অফ মাই রুম। ’
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, সবুর খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি এবং পরিচালক পর্ষদে তার স্বজনদের রেখে অনিয়মের আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়েই রয়েছে আত্মীয় আর সবুর খানের নিজ জেলা চাঁদপুরবাসীর প্রাধান্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু তাহের ড্যাফোডিলের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। তিনি যখন এটি ছেড়ে চলে যান, তখন তার প্রভিডেন্ট ফান্ড, আর্নড লিভ দেয়নি সুবর খানের পরিবার। ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয় অধ্যাপক তাহেরকে।  
 
ন্যায্য পাওনা থেকে এভাবেই ড্যাফোডিল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করা হয়। বিভিন্ন উন্নয়ন খাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হয়, তার ভাগ-বাটোয়ারা চলে সবুর খানের পরিবারের মধ্যে।
 
এর আগেও বাংলানিউজে এ বিষয়ে রিপোর্ট হয়। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। গত এপ্রিলে ওই রিপোর্টের সময় বিষয়টি নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ট্রাস্টি গঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বভাবের সঙ্গে যায় না।

পরিচালক (অ্যাকাউন্টস) পদ সর্ম্পকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের পদ থাকার কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয় দেখভালের দ্বায়িত্ব ট্রেজারারের।

অধ্যাপক আজাদ বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় সর্ম্পকে আগেও অভিযোগ রয়েছে স্বজনদের অগ্রাধিকারের বিষয়ে।

** অব্যবস্থাপনা ঢাকতে শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার করছে ড্যাফোডিল!

বাংলাদেশ সময় ১১৫২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।