ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দ্বিতীয় দিনের মতো অবরুদ্ধ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৪
দ্বিতীয় দিনের মতো অবরুদ্ধ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবী

রংপুর: চাকুরি স্থায়ীকরণ ও বেতন ভাতার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়ার মেয়াদে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শুক্রবার তিনি দ্বিতীয় দিনের মতো অবরুদ্ধ রয়েছেন।

মূলত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে তার অফিসকক্ষে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি অবরুদ্ধ রয়েছেন।

আন্দোলনকারীরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেই রাখবেন।

এদিকে আন্দোলনকারীরা উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ায় ভিসি গত দুই দিনে কোনো কিছুই খাননি। যতক্ষন না অবরোধ তুলে নেওয়া হবে ততক্ষণ উপাচার্যও কোনো কিছু মুখে দেবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

যারা আন্দোলন করছেন তাদের অধিকাংশই সাবেক ভিসি আব্দুল জলিল মিয়ার ঘনিষ্ঠ চার কর্মকর্তার আত্মীয় বলেও উপাচার্য অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে রয়েছে, সাবেক রেজিস্ট্রারের আপন ভাগিনা সায়েন্টিফিক অফিসার আহসান হাবীব, ভাগ্নি জামাই আবু তাহের আলী, ফুফাতো ভাই হাবিলদার সোহেল, উপ পরিচালক (পওউ) এ টি জি এম গোলাম ফিরোজের ছোটভাই সেকশন অফিসার গোলাম নূর, ভাগ্নি জামাই জনি প্রমুখ।


অভিযোগ আছে, আন্দোলনকারীরা প্রায় সবাই সাবেক উপাচার্যপন্থী হওয়ায় তারা তাদের দাবির চেয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির করে উপাচার্য পরিবর্তনকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আন্দোলনকারী অনেকেই অপরিচিত এদের আগে কখনো ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি।

ফলে ক্যাম্পাসের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেককেই তারা চিনছেন না এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন।

আন্দোলনের ব্যাপারে উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবী বাংলানিউজকে বলছেন, আমার করার কিছুই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে সব পদের অনুমোদন দেয় শুধু সেসব পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীই বেতন পান।

তিনি বলেন, এক বছর আগে আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে তিন'শ জনের চাকুরি ছিলোনা। তারা সবাই অননুমোদিত পদে নিয়োগ পেয়েছিলো। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ইউজিসি থেকে ২৫০টি পদের অনুমোদন এনে তাদের চাকুরি স্থায়ী করেছি।

তিনি বলেন, বাকি যারা আছেন তাদেরও পর্যায়ক্রমে চাকুরি স্থায়ী করা হবে। কিন্তু কবে হবে, এটা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ যতক্ষণ না ইউজিসি পদ ও টাকা দেবে ততক্ষণ আমার পক্ষে কাউকে পদে স্থায়ী করা সম্ভব নয় এমনকি বেতন দেওয়াও সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, যদি আজকে পদ পাই আজকেই তাদের চাকুরি স্থায়ী হবে। কালকেই বেতন পেয়ে যাবেন। অর্থাৎ যখনই পদ ও টাকা পাবো তখনই তাদের চাকুরি ও বেতন হবে।

সুত্র জানায়, সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়া ২৬০ অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৬৬৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সবশেষে তিনি এ সব জনবলকে বেতন দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএফ ফান্ডসহ সব ফান্ডই শুন্য করে রেখে যান। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে ছিলো মাত্র ১৩৩ টাকা ৫০ পয়সা।

অবৈধ নিয়োগ আর দুর্নীতির দায়ে দুদকে মামলাও রয়েছে সাবেক উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের নামে। যা বর্তমানে তদন্ত চলছে।

যে কারণে এই আন্দোলন
কোনো আল্টিমেটাম ছাড়াই হঠাৎ করে এমন আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে নানা কাহিনী। কথিত আছে, সাবেক উপাচার্য আব্দুল জলিল মিয়া ও সাবেক রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডলের বিরুদ্ধে দুনীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুদকে মামলার তদন্ত চলছে।

বর্তমান উপাচার্যকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য তদবির করতে বিভিন্ন সময়ে অনুরোধ করেও কাজ হয়নি। ফলে তাদের ধারণা বর্তমান উপাচার্যকে দিয়ে তাদের কোনো কাজ হবে না। তাই এ ভিসিকে পরিবর্তন করতে হবে। তাদের মনসতো পুতুল উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে তদের স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব।

ইতোমধ্যে সাবেক উপাচার্যের অনুসারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ কে উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রী দপ্তর পর্যন্ত লবিং শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।