ঢাকা: প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে রীতিমত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মধ্যে। প্রতিবেদন সত্য হোক আর মিথ্যা হোক তিনি রীতিমতো বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নাখোশ।
আর তারই ফলশ্রুতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে উদ্যোগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শনিবার বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন। রোববার মন্ত্রণালয়ে ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মন্ত্রী।
এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে টিআইবির প্রতিবেদনের জের ধরে কোন খাতে কত খরচ তা জানতে চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার সে চিঠির জবাব মন্ত্রণালয়ে এসেছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে গত ৩০ জুন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চেয়ে অর্থ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
টিআইবি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনসহ ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নিয়োগে আর্থিক লেনদেন করা হয়। পদে পদে অর্থ দিতে হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
টিআইবির প্রতিবেদন সরাসরি প্রত্যাখান না করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ওই প্রতিবেদন অসত্য। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ ছাড়া ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ২ বছর ধরে তারা যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, এতে মন্ত্রণালয়ের কারো সঙ্গে কোনো বলা হয়নি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে টিআইবি’র মন্তব্য যুক্তিসঙ্গত নয় বলে গত ২ জুলাই বিবৃতি দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়দের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব নন-গর্ভনমেন্ট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ (এএনইউবি)।
বিবৃতিতে এএনইউবি দাবি করে, ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর জরিপ পরিচালনা করায় টিআইবি প্রকাশিত প্রতিবেদনে অসম্পূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
এই অসম্পূর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয় বলেও মনে করে এএনইউবি।
কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, টিআইবি প্রমাণ করতে না পারলে তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।
তবে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (বিমক) টিআইবির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসি এক প্রতিবাদ লিপিতে দাবি করেছে, টিআইবি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন করতেই অপপ্রয়াস চালিয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক এবং অযৌক্তিক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিআইবির প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কাছে এ ব্যাপারে জবাব চাইবে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। তবে আদালতে বিষয়টির ফয়সালা হলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করবে সরকার। ইউজিসির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৪